খুঁজুন

Friday, March 24, 2017

কমলের একাত্তর / বাবু ফরিদী (৯)

 

 

কমল বাবাকে সান্ত্বনা দেয়, না, বাবা মিলিটারি শহরে ঢোকেনি ঢুকলেও হয়ত আমাদের এলাকায় কোন ক্ষতি করবে না যেখানে ওদের ভয় এবং বাধা সেখানেই ওরা আগুন ধরাবে, ক্ষতি করবে, গুলি চালাবে শহরে তো ওদের রুখবার কেউ নেই নির্বিঘ্নে শহরে ঢুকতে পারলে দেখবে কাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে

 

তুই জয় বাংলার পতাকা নামিয়েছিলি তো?

হ্যাঁ

পাকিস্তানি পতাকা?

তুলেছি

যাক, দোকানের সিন্দুকে শুকুর ডাক্তারের সর্বস্ব সেগুলো রক্ষা হলেও...

বাবার কথা শেষ না হতেই পরিচিত একজন বাবার সামনে আসে- ডাক্তারবাবু, কোথায় উঠেছেন?

তুলাগ্রাম ভোলাদা ওখানে’

লোকটির সাথে কথা বলতে বলতে বাবার চতুর্দিকে আরও কিছু পরিচিত মানুষ আসে এরই ফাঁকে কমল পা এগিয়ে যায় বাবার দৃষ্টি এড়ায় না বাবা বলেন, কোথায় যাস? আমরা চল ফিরে যাই ভাব বুঝে কাল আসা যাবে’

আমি একটু সামনে থেকে আসি বাবা, ওখানে আমার জন পরিচিত বন্ধুবান্ধব আছে’ -- কমল হাঁটতে হাঁটতে বলে

না, তোর ওদিকে যাবার দরকার নেই আমি এক্ষুনি ফিরবো’

আমার দেরী হলে তুমি ফিরে যেও বাবা আমি ওদের সাথে ফিরবো’

না, তুই এদিকে আয়’

এইতো আসছি’ -- কমল সামনের মানুষগুলোর ভিড়ে হারিয়ে যায়

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে কমল এক পা-দুপা করে এগোয় একগুচ্ছ মানুষ পেছনে ফেলে আর একগুচ্ছের সাথে এগোয় এভাবে জলার আগারীতে এসে পৌঁছে সামনেই ওদের গ্রাম

এরই মধ্যে রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায় কমল থমকে দাঁড়ায় ভোঁস-ভোঁস শব্দে কয়েকটি লরি (ট্রাক) আঙ্গিনা বরাবর শহরের দিকে ছোটার শব্দ ভেসে আসে কিছুক্ষণ পরে আরও কিছু ট্রাকের গর্জন শোনা গেল এবার শহরের দিকে আগুনের লেলিহান শিখা নজরে এলো সাথে গুলির শব্দ ছড়-ছড় শব্দে গাছপালা ভেদ করে চলছে বুলেট...

কতক্ষণ এভাবে কেটে গেছে, কমলের হিসেব নেই সম্বিত যখন ফিরল,তখন দেখল অল্প অল্প করে মানুষ গ্রামের মধ্যে নিজেদের ভিটা-বাড়ির দিকে ফিরছে

কমল দ্রুত পা চালায় ওদের বাসার উদ্দেশ্যে   শ্রীঅঙ্গনের দক্ষিণ দিক দিয়ে দ্রুত হেঁটে টইন্টা শীলের ঝোড়ের ভেতর ঢুকে পড়ে কিছুটা পথ অতিক্রম করে সোজা হারু দত্তের বাড়ি বরাবর শ্রীঅঙ্গনের বাগানবাড়ির ভেতরের নির্জন একপায়া পথ দিয়ে ওদের বাড়ি সোজা গিয়ে দাঁড়ায় তারপর দুই হাতে তারকাটার বেড়া ফাঁক করে ওদের বাড়ির চত্বরে পা রাখতেইঘেউ-ঘেউরবে ডলি চিৎকার শুরু করলো

কমল অস্ফুট স্বরে বলল, ডলি, থাম! আমি!’

কিন্তু কাজ হলনা দলির ঘেউ-ঘেউ শব্দ আরও জোরে জোরে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে চলল

এবার ধমকের সুরে বলল, আহ! ডলি, থাম!’

ডলি পা পিছিয়ে গিয়ে কুন্দি-ফান্দি করতে লাগলো ঘেউ-ঘেউ রবে সহসা একটি তিন ব্যাটারির টর্চের আলো এসে আছরে পড়লো ওদের বাড়ির দেয়ালে

কমল দ্রুত ছুট দেয় সেখান থেকে তারকাটার বেড়া ডেঙ্গিয়ে রুদ্ধশ্বাসে চক বরাবর দৌড়ায়                                         

আস্তানায় যখন ফিরল কমল, তখন দেখল উঠোনভর্তি লোক বাবা উদ্বিগ্ন চিত্তে পায়চারি করছেন মা কাঁদছেন কমলের নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল কেন যে ওদিকে গেল আর কিভাবে যে এতটা পথ ফিরে এলো, এখন তা কিছুই মনে করতে পারল না শুধু একটা দুঃখ মনের ভেতর মোচর খেল যে, এতদিনের পরিচিত ডলি এই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওকে চিনতে পারল না! আর একটু হলেই যে কী ঘটে যেত! অল্পের জন্য রক্ষা

বাবা ওকে দেখেই ছুটে এলেন কাছে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় গেছিলি?

বাসায়

         ‘বাসায়!?- বাবা আর কিছুই বলতে পারলেন না ওকে রাগে তার চোখ দুটো জ্বলছে, যেন কমলকে এই মুহূর্তেই গিলে খাবে তা বুঝতে পেরে মা ছুটে আসেন কমলের সামনে ওকে পেছন করে বাবা সামনে থেকে সরে যায়                             

No comments:

Post a Comment