খুঁজুন

Thursday, March 16, 2017

কমলের একাত্তর / বাবু ফরিদী (৪)



হঠাৎ কমলের বাবার মুখ ফসকে যায়কী যে হবে !

           
কমল বাবার মুখের দিকে তাকায় বাবাও তাকায় ওর মুখে বলে , এখন আর সময় নষ্ট করা ঠিক না চল, আমরাও শহর ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হই গে  
           
বাবার সাথে বাড়ি ফিরে আসে কমল আসার পথে প্রতিবেশী প্রায় বাড়িতেই মালপত্র বাঁধা-সাধা, লুকানোর কাজ দেখতে পায়

সমাদ্দার বাবুর বাঁধা-সাধার কাজ শেষ নিজেরাই হাতে-সাথে করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটবে অল্প কিছুক্ষণের ভেতর বাবাকে দেখেই তিনি এগিয়ে এলেন উৎকণ্ঠার সাথে বললেন, আপনি কেমন মানুষ বলেন তো ? এখনও কি ভাববার সময় আছে ? ঝটপট মালপত্র বেঁধে ফেলুন আর যে--'
 
সমাদ্দার বাবু একটু চাপা গলায় বাবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, সোনা-রুপা, কাঁসা-পিতল যা আছে, তা ঘরের মেঝে খুঁড়ে পুঁতে ফেলুন--- জীবনে বেঁচে থাকলে ফিরে এসে তুলবেন
        
ঠিক কথাই বলেছেন এত মালপত্র টেনে নেয়াও তো মুশকিল
          
সমাদ্দার বাবুর কাছ থেকে আরও একটি সৎপরামর্শ পেয়ে কিছুটা হালকা হলেন কমলের বাবা তারপর লেপ-তোষক, বইপত্র, চাল-আটাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কিছু কিছু বস্তাবন্দী, বাক্সবন্দী করতে থাকলেন কমল, ওর মাসহ পরিবারের অন্যান্য ভাইবোন যে যেভাবে পারে বাবাকে সাহায্য করলো
         
কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথায় একটি বড় বস্তাসহ সমাদ্দার বাবু পুনরায় কমলদের বাড়িতে এলেন ওর বাবাকে ডাকলেন
        
বাবা তাকে দেখে ঘর থেকে বেরুলেন বললেন, যাচ্ছেন ?
        
হ্যাঁ দাদা, জীবনে যদি বেঁচে থাকি একদিন হয়ত দেখা হবে আর যদি মরে যাই, কোন কিছুতে দাবি রাইখেন না দাদা ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন --- সমাদ্দার বাবু ডুকরে কেঁদে উঠলেন
         
বাবা তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে, অন্য হাতের তালুতে নিজের চোখ মুছলেন
        
সমাদ্দার বাবু বাড়ি ছাড়লেন পেছনে তাঁর স্ত্রী মার সাথে তাঁরও বিদায় নেবার পালা শেষ হলো আরও পেছনে বাবুল, বুলি, বাবন...
         
হঠাৎ করেই বাবার মাথায় যেন বাজ পড়লো তাড়াতাড়ি কমলকে ডেকে দোকানের চাবি দিয়ে বললেন, তুই শীঘ্রই বাজারে যা দোকানে গিয়ে জয় বাংলার পতাকাটা নামিয়ে পাকিস্তানি পতাকাটা টাঙিয়ে আয় তাড়াতাড়ি
         
বাবার কথা শেষ হতেই কমলের কান দিয়ে গরম বাতাস বেরুনো একটা থ্রিল কাজ করলো দৌড়ে বাজারের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়লো
          
কমল যখন যশোহর রোডে পা রাখল, তখন ওর বুকের ভেতর একটা অজানা আশংকা মোচড় খেল শতশত পরিবার ভাটির টানের মত পশ্চিমে যাচ্ছে, কেউবা দক্ষিণে, আর কমল ওদের উজানে  

শহরবাসীর বিপরীতমুখী টান ওকে আর একবার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিলো দু’-একজন হিতাকাঙ্খী ওকে শহরের ভেতর ঢুকতে বারণ করলো
           
কমল কারো কথায় কর্ণপাত করলো না বাবার নির্দেশের চাইতেও ওর এখন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে ভালো লাগে ভাটির স্রোতে ভাসা মানুষগুলো বিলি কেটে কেটে যখন ওদের দোকানের কাছাকাছি পৌঁছল, তখন দেখলো আলীমুজ্জামান সেতুর গোঁড়ায় টি মাড়োয়ারি পরিবার নৌকার অপেক্ষায় বসে আছে কমল ওদের  পরিবারের সকলকে দলবেঁধে এই প্রথম দেখল তাদের পায়ে হাঁটার সামর্থ নেই, রিক্সারও এই মুহূর্তে দারুণ অভাব তাই বাধ্য হয়েই নৌকার কথা তাদের মাথায় ঢুকেছে
          
শিবমন্দির সংলগ্ন ঘাটে অন্যদিন মাল ওঠানো-নামানোর কাজে যেসব নৌকা দেখা যেত সেগুলোর টিকিটি পর্যন্ত আজ দেখা যাচ্ছে না লোকজন বলাবলি করছে, নৌকাওয়ালারা আজ শহরে আসছে না ঘাটে যে টা রাতে বাঁধা ছিল, সেগুলো ভোরে গ্রামমুখী মানুষ নিয়ে ভেগেছে নৌকার মাঝিদের ভয়য়, নৌকা হোল শেখ মুজিবের মার্কা; খানসেনাদের আক্রোশ হয়তো ওটার ওপরই থাকবে বেশী
           

(চলবে)

No comments:

Post a Comment