ধীরেন
বাবু
বললেন,
‘সামগ্রিকভাবে
বিষয়টি
বাঙালিদের
হলেও,
ক্ষতি
যা
হবার
তা
এদেশের
হিন্দু
এবং
আওয়ামী
লীগারদেরই
হবে,
সাথে
অতি
বিপ্লবীদের’।
‘কী যে বলেন ! শতকরা আটানব্বই
ভাগ
ভোট
পেয়ে
জয়ী
হয়েছে
আওয়ামী
লীগ
। এতে কি আর বুঝতে বাকী থাকে এখানে সবাই আওয়ামী
লীগ
সমর্থক
? তাছাড়া
আমরা
তো
মাইনরিটি,
আমাদের
তুলনায়
মেজরিটির
মধ্যেও
তো
আওয়ামী
লীগার
বেশী’
।
‘এটা রাজনীতি,
বুঝলেন
? হিন্দুদের
উপর
আঘাত
হেনে
বাঙালি
মুসলমানদের
স্বাধীনতা
আন্দোলন
থেকে
ফিরিয়ে
আনাই
ওদের
লক্ষ্য’।
‘আচ্ছা, মোহন মিয়া সাহেব কি আমাদের
জন্য
কিছু
করবেন
না
?’
‘বিগত দিনে তো ফরিদপুরের
হিন্দুদের
রক্ষায়
ওনার
ভূমিকা
ছিল
প্রশংসনীয়
। এখন তো উনিও নেই । বাঙালিদের সংগ্রাম
তো
ওনাদের
বিরুদ্ধে
। তবে ফরিদপুরের
হিন্দুদের
জন্য
উনি
এখনও
যা
করছেন
তা
প্রশংসনীয়’।
‘সে ক্যামন
?’
– বাবার
আগ্রহ
বেড়ে
যায়
।
‘টিক্কা
খানের
ঢাকার
মিটিং-এ উনি ছিলেন । ফরিদপুরে আরও আগে মিলিটারি
আসার
কথা
ছিল
। উনি সময়টা পিছিয়ে
দিয়েছেন
। পাকিস্তানী মিলিটারিদের
মেজাজ
কিছুটা
ঠাণ্ডা
হবার
সুযোগ
আর
সেই
সাথে
ফরিদপুরের
সম্ভ্রান্ত
হিন্দুদের
সরে
যাবার
সুযোগ
। তাঁর এক লোক ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে এসে গত ১৯ তারিখে
মোহন
মিয়ার
স্টেটের
ম্যানেজার
পাঠকবাবুর
কাছে
একটি
তালিকা
দিয়েছেন
। যেখানে প্রায় পাঁচশত
হিন্দুর
নাম
আছে
। যাদের নিরাপদ
আশ্রয়ে
সরে
যেতে
পরামর্শ
দিয়েছেন তিনি
। ঐ তালিকায়
শ্রীঅঙ্গনের
(প্রভু
জগদ্বন্ধু
সুন্দরের
আশ্রম,
ফরিদপুরের
সবচেয়ে
বড় মন্দির, গোয়ালচামট) ডঃ মহানামব্রত
ব্রহ্মচারী
ও
শ্রীমৎ
অমরবন্ধু
ব্রহ্মচারীর
নামও
আছে
। অমরদার কাছ থেকেই খবরটা জানলাম’।
কথায়
কথায়
অনেক
সময়
পার
হয়
। বাইরের সব কিছু পরিস্কার
দেখা
যায় । ভোরের পাখিদের
ডাক
সমাদ্দার
বাবুকে
অস্থির
করে
তোলে
। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে
উঠে
পড়েন
। কমলের বাবাও তার সাথে উঠে বাইরে বেরোন ।
সবার ঘরে আজ সকালটা
একটু
আগে-ভাগেই হয়েছে । অনেকের চোখে-মুখে রাত্রি
জাগরণের
দীপ,
প্রায়
সকলের
মধ্যেই
উৎকণ্ঠা
। হাঁটতে হাঁটতে
কমল ওর
বাবার
সাথে
রাস্তার
ওপর
গিয়ে দাঁড়ায়
। রাতজাগা মানুষের
ইতস্তত
বিক্ষিপ্ত
পদচারণা
। সকলের মুখোভাব
লক্ষ্য
করে
কমল
মিলিয়ে
দেখে
একজনের
সাথে
আরেকজনের
। সমাদ্দার বাবুর কথার সাথে কমলের হিসেব মিলে যায় । হিন্দুদের চোখে-মুখে যতটা উৎকণ্ঠা
ও
ভীতির
ছাপ,
মুসলমানদের
মুখমণ্ডলে
ততটা
তীব্র
নয়
। কমল অনুমান
করে,
বিহারি
কলোনী
সংলগ্ন
মুসলমান
বলেই
হয়তো
এমন
। কারণ দু’-একজন বিহারি
যা
এই
মুহূর্তে
চোখে
পরছে
তাতে
কমল
নিশ্চিত
যে
মিলিটারি
আসছে
এবং
বিহারি
অধ্যুষিত
এলাকার
বাঙালি
মুসলমানদের
রক্ষা
তারাই
করবে
। এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক
। গত পঁচিশে
মার্চের
পর
থেকে
বিহারিদের
ওপর
যত
বিপদ
আসার
সম্ভাবনা
ছিল
তা
নস্যাৎ
করেছে
এলাকার
বাঙালি
মুসলমানরাই
। তবে হিন্দুরা
যে
এসময়
তাদের
সহযোগিতা
করেনি
তা
নয়
।
হঠাৎ করেই চিন্তায়
ছেদ
পড়ে
কমলের
। দু’জন তুখোড় ছাত্রনেতা
রিক্সায়
চেপে
যাচ্ছে
পশ্চিমে
। একজন
কমলকে দেখে হাত
তুলে ইশারা করে
। কমল
সেদিকে না তাকিয়ে
পূর্বে মুখ ঘুরায়
। আর
দুটো রিক্সা ছুটে
যায় পশ্চিমে । তারা
আওয়ামী লীগের নেতা
। পেছনে
পর পর ক’টি
রিক্সাতে মেয়েছেলেসহ
একাধিক পরিবার । সবাই
শহর ছাড়ছে ।
অল্প
সময়ের ব্যবধানে
শহরের পরিবেশ বদলে
যায় ।
শহরের সমস্ত রিক্সা
যেন শোভাযাত্রা বের
করেছে ।
সব ক’টিতেই
শিশু, নারী ও
বৃদ্ধ ।
পশ্চিমে গাও-গ্রামের
আত্মীয়-স্বজনদের আশ্রয়ে
যাচ্ছে সবাই । রিক্সাভাড়ার
এখন আর কোন
মা-বাপ নেই
। যে
যেভাবে ভাড়া হাঁকছে,
সেভাবেই তা
মিটছে ।
পয়সাওয়ালাদের কোন
কিছুতেই অসুবিধে
হয় না । রিক্সায়
যেসব পরিবার শহর
ছাড়ছে, তাদের অধিকাংশই
শহরের নামী-দামী
পরিবারের লোক
। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরাও
শহর ছাড়ছে, তবে
তারা সংখ্যায় কম
এবং পায়ে হেঁটেই
। তাদের
মাথার বস্তায়, কাঁখের
পোটলায় সংসারের প্রয়োজনীয়
খুঁটিনাটি জিনিস
।
দেখতে
দেখতে আরও একটি
বিষয় কমলের নজরে
এলো, তাহলো এলাকার
বদমাশ কিছিমের কিছু
লোকের হাতে রামদা,
ড্যাগার উঠে
এসেছে ।
যে ধরনের অনেক
অস্ত্র ইতিমধ্যে যশোহর
রোড সংলগ্ন মনা
পোদ্দারের ভাড়াটিয়া
শম্ভু কর্মকারকে দিয়ে
খানসেনা নিধনের
প্রয়োজনে তৈরি
করা হয়েছিল ।
কমলের আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যায় । সমাদ্দার বাবুর কথার সাথে পরিবেশের সাযুজ্য খোঁজে ।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment