খুঁজুন

Saturday, January 14, 2017

সংলাপ ছাড়াই গোটা একটা ভালোলাগার ছবির গল্প!



গল্পটি দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে এক হাসি ভালোবাসা খুঁজে নেয়ার। গল্পটি আর দশটি গল্পের চেয়ে আলাদা। কারণ গল্পটিতে নেই কোনো সংলাপ। কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে ফেলা হয় এই গল্পে। এই গল্পটি আজ থেকে আমার অন্যতম ভালো লাগার গল্প।

গল্পের মুখ্য চরিত্র মাত্র দুটি। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের গল্প এটি। ওরা বিবাহিত। কিন্তু, দৈনন্দিন জীবনের জীবিকার তাগিদে ব্যস্ততার মাঝে, ওরা একে অন্যের সঙ্গ পায় খুব অল্প সময়ের জন্য। সেই সময়টুকুই ওদের বহু আকংখার, যেন কল্পিত স্বর্গরাজ্যে কাটানো একান্ত কিছু মুহূর্ত!

গল্পের শুরু একটি মেয়েকে দিয়ে। যে মেয়েটি সদ্য বিবাহিত, থাকে কলকাতার এক পুরাতন বাসায়। মেয়েটির কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার চিত্রপট দিয়ে গল্পের শুরু। কলকাতার অলিগলি হয়ে ট্রাম-বাসে চড়ে অফিসে যাওয়া, আছে শব্দ আছে গান কিন্তু নেই কোনো সংলাপ। মেয়েটি যখন অফিসে কাজে ব্যস্ত, ছেলেটি তখন বাসায়, একা। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া, বাজার করা, আবার ঘুমানো। মেয়েটির ফিরতে ফিরতে ছেলেটি ততক্ষণে তার পুরাতন বাইসাইকেলটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। দুজনের দেখা হবার উপায় নেই।

মেয়েটিও ফিরে ছেলেটির মতোই বাসার বাকি থাকা কাজগুলো সারে, স্নান সারে, কাপড়চোপড় গুছায়। তারপর খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ছেলেটি তখন প্রেসে, পত্রিকা ছাপানোর কাজে ব্যস্ত। তার কাজ রাত জাগার। কাজ করতে করতেই ভোর হয়। ছেলেটি মেয়েটিকে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। মেয়েটি ফ্রিজে রাখা মাছ তরকারি নামিয়ে রান্না করে, স্নান করে পূজো দেয়। এরই মধ্যে ছেলেটি ছুটি পেয়েই ভোরের আলোয় ঘুমন্ত রাস্তা মাড়িয়ে সাইকেলে শরীরের সকল শক্তি লাগিয়ে জলদি বাড়ি ফেরে। এই ফেরায় ভালোবাসা আছে, প্রিয় মানুষটার মুখটা একটিবার দেখার জন্য আকুতি আছে।

ছেলেটি ঘরে ঢুকে দেখে, মেয়েটি কেবল পূজা শেষ করলো। চুলগুলো তখনও ভেজা ওর। এরপর, দৃশ্যপট পাল্টে যায়। মুছে যায় শহুরে শব্দ। ওরা হারিয়ে যায় এক গহীন বনে। সেখানে ওরা দুজন মিলে কিছুক্ষণ একাকী সময় কাটায়। হঠাৎ মেয়েটি ছেলেটির হাতঘড়িতে সময় দেখে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। ছেলেটার মুখ তখন কালো। সেই কালো মুখে হাসি ফুটিয়ে সে মেয়েটির শাড়ি সেফটি পিন দিয়ে আটকে দেয় ওর লাল ব্লাউজে। এক মুখ হাসিময় ভালোবাসা দিয়ে বিদায় দেয় ওকে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত মেয়েটির দেখা পাওয়া যায়, ততক্ষণ জানালা দিয়ে চেয়ে থাকে। এটাই মনে হয় পৃথিবীর পবিত্রতম ভালোবাসা!

এতক্ষণ যে গল্পটি শুনলেন, সেটি একটি ছবির গল্প। আদিত্যবিক্রম সেনগুপ্তর ব্যাতিক্রমধর্মী ছবিটির নাম 'আসা যাওয়ার মাঝে', ইঙ্গরেজিতে 'Labour of Love'। অর্জন করেছে দেশ-বিদেশে অনেক পুরস্কার। গোটা ছবিতে কোথাও কোনো সংলাপ নেই। তাই শুরুতেই বোরড হয়ে না গিয়ে, ধৈর্য ধরে পুরোটা দেখুন। আমার বিশ্বাস আপনারও ভালো লাগবে। মেয়েটির সাদামাটা চেহাড়া, কপালের লাল টিপ, সুন্দর করে শাড়ি পড়া, চুলের ঐ বেণীর প্রেমে আমি পড়ে গেছি। আপনাকেও প্রেমে পড়ার আমন্ত্রণ।

-দেব দুলাল গুহ

No comments:

Post a Comment