খুঁজুন

Saturday, November 30, 2019

ফরিদপুর শ্রীঅঙ্গনের এই দুর্দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় সবাই

শুনলাম শ্রীঅঙ্গনের মহানাম সম্প্রদায়ের সভাপতি কান্তি বন্ধু আজ 'প্রেসার বেড়ে' অ্যাম্বুলেন্সযোগে ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আশা করা যেতেই পারে তিনি এক সপ্তাহের আগে ফিরবেন না এবং চিকিৎসকরা তাঁকে 'উন্নত চিকিৎসা'র জন্য ভারতে পাঠাবেন। কী দারুণ টাইমিং! অসুস্থতাও আজকাল সময় করেই আসে! তাঁর শিষ্যরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, 'আহারে, বন্ধুসেবককে কতই না ভালোবাসতেন মহারাজ! তাঁর প্রস্থান সইতে না পেরে তিনিও শয্যাশায়ী হলেন!' অথচ লাইভ ভিডিওতে আপনারা দেখেছেন তিনি জনতার দাবির মুখে বন্ধুসেবকের সমাধি শ্রীঅঙ্গনে রেখেছেন, নইলে বাইরে পাঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা ছিলো। সমাধিস্থ করার সময়ও তিনি দূর থেকে দেখেই চলে যান, কাছে যাননি।
.
সুতরাং, আগামীকাল সভাপতি কান্তি বন্ধুর বাদী হয়ে করা ৩০৬ ধারায়(সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের জেল) করা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড শেষে আসামী বিজ্ঞান বন্ধু যখন আদালতের কাঠগড়ার দাঁড়াবেন, গতবারের মতো এবারও হয়তো বাদী কান্তি বন্ধু সেখানে অনুপস্থিত থাকবেন। এবার আর কেউ তাঁকে 'ছি ছি' করতে পারবে না, কারণ এবার তিনি 'অসুস্থ'! শোনা যাচ্ছে, বিজ্ঞান বন্ধুর পক্ষে লড়ার জন্য নেতা গোছের এপিপিসহ প্রায় ৩০-৪০ জন আইনজীবী নাকি ইতিমধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডঃ সুবল সাহার অধীনে আদালতে লড়ার জন্য প্রস্তুত! অন্যদিকে বাদীপক্ষে কোনো উকিলই এখনও ঠিক করা হয়নি বলে ভেতরের একটি সূত্র জানিয়েছে!
.
ফলে কি হবে? উকিলের অভাবে আসামী জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসবে কালকেই? কারণ কালকেই আদালতের ছুটির আগের শেষ কর্মদিবস! তবে ঐ আদালতের বিচারক যিনি, তাঁকে যতটা চিনি, এতো সহজে তাঁর হাত থেকে ছাড়া পাওয়া মুশকিল হবে। তিনি বরিশালের লোক, খুব শক্ত। ১ এপ্রিলে আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় আমার মা বাদী হয়ে করা মামলাটি তিনিই পি,বি,আইতে তদন্তে দিয়েছেন এবং সবাই বলে পুলিশের সংস্থাগুলোর মাঝে এই সংস্থাটির সুনামই এখন সবচেয়ে বেশি।
.
তবে প্রশাসন-পুলিশ-বিচারকেরা আন্তরিক থাকলেও যদি আঙিনার সাধুরা চুপচাপ অন্যায়কে মেনে নেন, তাহলে সেটা শ্রীঅঙ্গন শুধু নয়, মহানাম সম্প্রদায় শুধু নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্যও লজ্জা ও কলংকের হবে। যদি কাল বিজ্ঞান বন্ধু জামিনে বের হয়ে আসে এবং আবার আঙিনায় ফিরে আসে, তবে তা হবে বন্ধুসেবকের 'আত্মাহুতি'র অসম্মান। কেউ কেউ তো এমনও বলতে শুরু করেছে, বন্ধুসেবক আত্মহত্যা করার মতো দুর্বলচিত্তের লোক ছিলেন না, তাঁকে মেরে ঝুলানো হয়েছে। হয়তো কমিটির বাইরের কেউ কমিটির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের জটিলতার বিষয়টি জানতে পেরে ভেতরের কারো সাথে মিলে  এমন কান্ড ঘটাতেও পারে, বলা যায় না! সঠিক ময়না তদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বেরিয়ে আসবে।
.
আমার জানামতে আঙিনায় এমন কোনো সাধু এখন নেই যিনি জামিনে বেরিয়ে এলে আবার তাঁর কাজিন কমিটির সদস্য কিংকর সুকেশ সঞ্জীবনদের সহায়তায় শ্রীঅঙ্গনে প্রবেশের থেকে বিজ্ঞানবন্ধুকে রুখতে পারবেন। সভাপতি কান্তি বন্ধু 'অসুস্থ' হয়ে যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি, সেহেতু ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ উকিল সাহেবও চাইলে মামলা লড়তে পারেন। কিন্তু তিনি যেন হারার জন্য না লড়েন। যে কমিটির দেওয়া মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে বন্ধুসেবক 'আত্মহত্যা করেছেন', সেই কমিটি থাকতে বাকি অল্পবয়সী সাধুরা চাইলেও কিছু করতে পারছেন না বলে অনেকেই আমাকে ফোনে আক্ষেপ করেছেন। যারা প্রতিবাদ করতে পারতেন, তাঁরা বিভিন্ন সময় প্রায় একই ধরণের অভিযোগে কমিটি থেকে এমনকি সম্প্রদায়ের সাধারণ সদস্যপদ থেকেও বহিস্কৃত হয়েছেন! তাই তাঁরাও চাইলে কিছু করতে পারছেন না। আবার শুনলাম সাধুদের বাইরের আইন জানা সদস্যরা কমিটির গঠনতন্ত্র এমনভাবে করে রেখেছেন যেন সহজে ভেঙেও দেওয়া না যায়! এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল সাহাকে সভাপতি পদ থেকে সরানোর পর তিনি নাকি ঐ গঠনতন্ত্রের দুর্বলতার সুযোগে মামলা করে দিয়েছিলেন কমিটির বিরুদ্ধে!
.
এদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাধুদের দেওয়া ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষে সভাপতি সময় চেয়েছিলেন কাল রবিবার পর্যন্ত, যে কাল সন্ধ্যা ৭টায় মিটিং হবে কমিটির সাথে সাধুদের, কমিটি ভাঙ্গার ব্যাপারে। তিনি 'অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি' হওয়াতে সেটাও আর হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে! তার মানে এতোকিছুর পরেও এবং জেলা প্রশাসক অতুল স্যারের নির্দেশ/অনুরোধ স্বত্ত্বেও কমিটি বহাল থাকছে। শুক্রবার সাধুদের অনশনে বসা যাতে নাহয়, সেজন্যই মিটিংয়ের তারিখ দেওয়া হয়েছিলো?
.

তবে আশার কথা হলো, যতদূর জানি এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ যেহেতু দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করেছে, তাই পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দিয়েছে। 'নিজেদের কলংক মুছতে বা ঢাকতে' আরেকটি মামলা দিয়েছেন মহানাম সম্প্রদায়ের সভাপতি কান্তি বন্ধু ব্রহ্মচারী বাদী হয়ে, ৩০৬ ধারায়।এই মামলাটি কোথায় হয়েছে জানি না। যদি থানায় হয়ে থাকে, তাহলে এখানে উকিল না থাকলেও চলবে। এখানে জিআরও/সিএসআই বাদীর হয়ে মামলা লড়বেন। কারণ, থানা হয়ে কোর্টে গেলে মামলার বাদী হয়ে যায় রাষ্ট্র। আর যদি মামলা আদালতে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে উকিল নিয়োগ দেওয়া লাগবে। সেক্ষেত্রে সভাপতি যেহেতু হাসপাতালে, সেহেতু যেকোনো একজন সাধুই চাইলে সাহস করে আদালতে গিয়ে একজন উকিল নিয়োগ দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে এদের বিরুদ্ধে আমি আমার মামলায় কোনো হিন্দু উকিলকে পাইনি, তাই বলা যায় এখানে মুসলিম উকিল লাগবে। উকিল না পেলে আমাকে জানাবেন, আমি জোগাড় করে দেবো এবং বন্ধুসেবকের ভক্তরা মামলার খরচ চালাবে। তবুও বন্ধুসেবকের আত্মাহুতি যেন কিছুতেই বৃথা না যায়।
.
গত ২১/০৯/১৮ আঙিনার ভেতর আমাকে মারার মামলায় কোর্টে প্রতিপক্ষে স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর তৃষ্ণা সাহার বড় ছেলেসহ সকল আসামীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে এই শ্রীঅঙ্গন বর্তমান কমিটির প্রভাবশালী সদস্য নারায়ন উকিল বলেছিলেন, সবসময় ৩-৪ জন সাধু মন্দিরে থাকলেও তাঁদেরকে কেন আমি সাক্ষী মানিনি? অতএব মারার কোনো ঘটনাই নাকি ঘটেনি! আমি বলেছিলাম, সাধুরা ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, মামলার ঝামেলায় জড়াতে চান না, তাই প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের সাক্ষী মেনেছি। বলেছিলাম সিসি ফুটেজ দিয়ে প্রমাণ করুন ঘটনা ঘটেছে কিনা। তাঁরা ফুটেজ দেখাতে পারেন নি। উল্টো রাষ্ট্রপক্ষের উকিল অনিমেষ রায়-জাহীদ ব্যাপারিরা নিষ্ক্রিয় থেকেছেন বিধায় আসামীরা খালাস পেয়ে গেছে শক্ত সাক্ষ্যর পরেও! (পরে রিভিশনের আবেদন করেছি) এবার বুঝলেন তো, আমি কেন একথা বলেছলাম বা রিভিশন পিটিশন লিখেছিলাম? স্থানীয়দের ভাষ্য, সাধুরাও অনেকটা কমিটির হাতে জিম্মি। এদের বাইরে বললেই বন্ধুসেবকের মতো পরিণতি ভোগ করতে হয় অথবা বহিস্কৃত হতে হয়। এতোদিন আমি এসব বলেছি বলে আমাকে 'নাস্তিক' ট্যাগ দিয়েছে, এখন বন্ধুসেবকের মৃত্যুর ঘটনায় সবাই তার সত্যতা পাচ্ছে!
.
মোট কথা, যেহেতু সভাপতি কোনো শক্ত ভূমিকা এখানে রাখছেন না, সেহেতু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিখ্যাত এই শ্রীধাম ও সম্প্রদায়ের সম্মান ও নিরাপত্তার প্রশ্নে ফরিদপুরের বর্তমান প্রশাসন, পুলিশ ও আদালতকে এখন এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। লাশ সমাধিস্থ করার দিনের লাইভ ভিডিওসহ আমার সকল লেখায় অনেক তথ্য আছে, যা কাজে লাগানো যেতে পারে। একজন স্থানীয় হিসেবে ও বন্ধু সেবক মামার ভাগ্নে হিসেবে এই বিষয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি প্রার্থনা করছি, যেন এই 'হত্যাকান্ডে'র সাথে জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে দেশ-বিদেশে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায় এবং বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ সাধারণ জনগণ কতটা সুরক্ষিত আছে তা প্রমাণ করা যায়। অপরাধী নিজের দলের হোক আর বাইরের, কাউকেই যেন মাননীয়া ছাড় না দেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা তিনি, তিনিই আমাদের শেষ ভরসাস্থল। জয় বাংলা।
.
দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী

Sunday, November 17, 2019

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ রোধে করণীয়

আমি বলে দেই কেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। শুনবেন? হয় আপনার ভুলের কারণেই এবং সবকিছু মেনে নেওয়ার প্রবণতা থেকেই। হ্যাঁ, নিচের কথার সাথে মিলিয়ে দেখুন ঠিক কিনা।

দোকান থেকে আপনাকে যে সিলিন্ডারটি দিয়ে যায়, সেটি পুরাতন কিনা বা মরিচা ধরা কিনা, কোথাও ছিদ্র আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখুন। আমার ধারণা আপনি অতো দেখতে যান না। পুরাতন বা মরিচা ধরা সিলিন্ডারটিই আপনি মেনে নেন।

সিলিন্ডারের এই দশা কিন্তু এমনিতে হয়নি, হয়েছে অব্যবস্থাপনার কারণে। খালি সিলিন্ডার কিভাবে আছাড় দিয়ে ফেলা হয় আনা-নেওয়ার সময় কিংবা গ্যাস ভরার আগে, সেটা দেখলেই বুঝবেন। উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় গ্যাসসহ এসব সিলিন্ডার, অথচ আনা-নেওয়ায় যত্ন করা হয় কম, কাজেই থেকে যায় ঝুঁকি। 

তাই এখন থেকে দোকান থেকে সিলিন্ডার দিয়ে গেলে পুরাতন মরিচা ধরা সিলিন্ডার নেওয়া বাদ দিন। নতুন সিলিন্ডার দিতে বলুন। না দিলে অন্য দোকান থেকে নিন। এই প্রতিবাদ প্রতিটা জেলায় শুরু করেন, দেখবেন তারা বাধ্য হবে নতুন সিলিন্ডার দিতে এবং যত্ন করতে। আমি সবসময় নতুন সিলিন্ডার দেখে নেই। উচ্চদাম নিয়েও প্রতিবাদ জানাতে বলতাম, কিন্তু আমি জানি আপনারা কেউ সেটা করবেন না। মেনে নিয়েছেন সবাই।

তারপর লক্ষ্য করুন আপনার গ্যাসের পাইপে কোথাও ছিদ্র আছে কিনা। কিভাবে বুঝবেন? সিলিন্ডার থেকে পাইপ হয়ে গ্যাস যাওয়ার পথে কোথাও ছিদ্র থাকলে গ্যাস বাইরে বেরিয়ে যাবে। সিলিন্ডারের সুইচ অন করলেই (নিচের দিকে দিলেই) গ্যাস বের হবে, কিন্তু গ্যাসের চুলার সুইচ অন না করলে সেই গ্যাস নাকে লাগার কথা না। যদি লাগে, তাহলে বুঝবেন কোথাও ছিদ্র বা লিকেজ আছে। সেটা খুঁজে বের করতে মেকানিক ডাকুন। এটা জরুরি। ছিদ্র বন্ধ করার আগেই রান্না করতে যাবেন না।

মাঝে মাঝে রেগুলেটর পুরাতন হয়ে যায় অথবা বাইরে ঠিকঠাক দেখালেও ভেতরের পিনটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওখান দিয়েও গ্যাস বের হয়। ওটা দিয়ে সিলিন্ডারের সুইচ উপরে উঠালে বা গ্যাস নির্গমণ বন্ধ করলেও পিন নষ্টের কারণে গ্যাস বের হতেই থাকে।

একটু দামী হলেও নিরাপত্তার বিবেচনায় গ্যাসের চুলা কিনবেন অটোমেটিক দেখে। ম্যাচ দিয়ে জ্বালাতে হয় এমনটা না কেনাই ভালো। লিকেজ থাকলে ঘর গ্যাসে ভরে থাকবে এবং ম্যাচের কাঠি জ্বাললেই বিস্ফোরণ ঘটবে। আমার বাসার গ্যাসের চুলা প্রায় ১৫-১৭ বছরের পুরাতন। কিন্তু অটোমেটিক। চুলায় চুইচ দিলে অটোমেটিক সুইচের নিচের কাঠির ঘর্ষণের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে গ্যাসের চুলা জ্বলে ওঠে।

গ্যাসের সিলিন্ডারের আশেপাশে কাছাকাছি বা গা ঘেঁষে কোনো গরম বা রান্না করা কিছু রাখবেন না। এসব গরম বস্তুর স্পর্শে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে পারে।

আমার বাসার গ্যাসের চুলাটি আছে একটি ইট-সিমেন্টের তাকে উপর, আর সিলিন্ডার রাখার জায়গা তার নিচে। অর্থাৎ গ্যাসের চুলা আর সিলিন্ডারের মাঝে শক্ত তাপ কুপরিবাহী দেয়াল আছে। এটার কারণে গ্যাসের চুলার আগুণ বা গরম কিছুতেই সিলিন্ডারের গায়ে লাগে না। আমার বাবা(কবি বাবু ফরিদী)-কে ধন্যবাদ, এমন সুন্দর নিরাপদ ব্যবস্থাপনা রেখে যাওয়ার জন্য। সুতরাং গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডারের মাঝে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

গ্যাসের চুলায় দুধ বা অন্য কিছু চড়িয়ে দিয়ে অন্য কাজে মন দিবেন না। আপনার আসতে দেরী হলে বা অন্যমনস্ক হয়ে ভুলে গেলে দুধ উতলে উঠে গ্যাসের আগুনে পড়বে এবং সেই গরম দুধ সিলিন্ডারের গায়ে কোনোভাবে লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গ্যাসের চুলায় রান্না করার সময় দরজা-জানালা খুলে রাখবেন যাতে হাওয়া আসা-যাওয়া করে ঘরে। এতে লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হয়ে থাকলেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

রান্না শেষে সবসময় সিলিন্ডারের চাবি উপরে উঠিয়ে গ্যাস বের হওয়া বন্ধ করে যেতে ভুলবেন না। একটু অসাবধানতা বা সতর্কতা ও আলসেমির কারণেও আপনার ও আপনার পরিবারের জীবন যেতে পারে। তাই সতর্ক হোন। এমনিতেও আপনি পত্রিকা পড়লেই বুঝবেন মৃত্যু কীভাবে হাজারটা ফাঁদ পেতে আমাদের আশপাশে অপেক্ষা করছে..

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী

Sunday, January 13, 2019

আমি কি অনেক বড় পাপ করে ফেললাম?

ফরিদপুরের নামকরা এক হোটেলের নিচের একটা সেলুনে ছোটবেলায় বাবার সাথে যেতাম চুল কাটাতে। চুল কাটানোকে বরাবরই আমার খুব বিরক্তিকর কাজ বলে মনে হয় যদিও। সেলুনটা আমার কাকার বন্ধুর, আমাদের বাড়ির পাশেই বাড়ি। আমি গেলেই কাকা অথবা তার বোনের জামাই অনেক সময় নিয়ে যত্ন করে আমার চুল কাটতো। কাকা আছেন, কিন্তু তার বোনের জামাই বেঁচে নেই। সেই বিধবা পিসি এসেছিলেন বাসায়। পা ফুলে ঢোল হয়ে আছে তার, নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। সেই পা নিয়েই খুব কষ্টে হেঁটে হেঁটে এসেছেন।
.
আমার মা ডিএইচএমএস ডাক্তার, মানে হোমিও ডাক্তার। এলাকায় বেশ নামজশ আছে, তবে খুব সামান্য পয়সায় ওষুধ দেয় বলে কেউ কেউ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ১৮ বছর ফরিদপুর শ্রীঅঙ্গন দাতব্য চিকিৎসালয়ে মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মাসিক বেতনে সেবা দিয়েছেন। রোগীপ্রতি ৫টাকা ভিজিট ছিলো, যে পারতো না সে দিতো না। ওষুধ সরবরাহ করতো বাজারের মারোয়ারিরা। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর এলাকার প্রভাবশালীরা মন্ত্রী লোক পরিচয় দিয়ে সেখান থেকে আমার মাকে নানাভাবে অপমান করে সরিয়ে অন্য কাউকে বসানোর চেষ্টা করেছে। ঢাকায় থাকতে মা আমার কাছে এসব বলতো না, কিন্তু ফরিদপুর ফিরে দেখে প্রতিবাদ করেও ফল না পেয়ে নিজে থেকেই মাকে বসতে মানা করেছি।
.
তো, সেই দাতব্য চিকিৎসালয়ের সুবাদে মা দুঃস্থ জনগণের কাছে সেই ৫টাকা ১০টাকার ডাক্তারই রয়ে গেছে৷ এখন খুব সীমিত পরিসরে বাসাতেই টুকটাক রোগী দেখে, শিক্ষকতার পাশাপাশি। মা নিজেও অসুস্থ। অনেক সময় দেখি পাশের বিহারী কলোনির থেকে মহিলারা আসে ওষুধ নিতে। নেওয়া শেষে মা যখন খুব কষ্টে ৩০ টাকা চায়, তারা তখন কোছের ভেতর থেকে ১০টাকা বের করে বলে বাকি টাকা পরে দেবো। বাকির নাম তো ফাঁকি, কেউ কেউ দেয়, যারা দেয় না মাও ভুলে যায়। সামর্থবান কেউ কেউ এসেও বলে, 'ছেলের জন্যে চিপস কিনতে আইছিলাম দুকানে, তাই ১০টাকা আছে। কাকি পরে দিবানে..'
.
আমার মায়ের ওপর আমার তখন রাগ হয়। সে মুখ ফুটে বলতেও পারে না যে এই ওষুধ তো আর ফ্রিতে কেউ দেয় না, বাসার ওষুধ আমাকে বাজার থেকে কিনে আনতে হয়।  আসা-যাওয়াতেই তো ১০ টাকা অটোভাড়া অথবা ৪০ টাকা রিক্সাভাড়া চলে যায়! অন্য ডাক্তাররা যখন ১০০-২০০ টাকা ভিজিটের কমে রোগীই দেখেন না, এমবিবিএস ডাক্তারের ভিজিট যেখানে কমপক্ষে ৫০০ টাকা, সেখানে তিনি ওষুধ দিচ্ছেন ১০ টাকায়, যা খেয়ে ওসুখ নিশ্চয়ই ভালো হয়, নাহলে আবার আসে কেন?
.
বাবাকেও একই কাজ করতে দেখেছি। আমার দাদু প্রয়াত কালীপদ গুহ ছিলেন বড় ব্রিজের ঢালের নামকরা শুকু ডাক্তারের কম্পাউন্ডার। তবে এটা তাঁর মূল পেশা ছিলো না। জমিদারি সামলানো আর অন্য কাজের পাশাপাশি এটা করতেন সেই স্বাধীনতাপূর্বকালে। সেখান থেকে তিনিও কিছু বিদ্যা দিয়ে যান বাবাকে। বাবা চাকরি ওকালতি লেখালেখির পাশাপাশি বিকেলে এলাকার কেউ এলে ফ্রিতেই তাকে ওষুধ দিতো। এমনকি ফরিদপুর শহরের অনেক বড় বংশের মহিলারা বাবার বুদ্ধি নিয়ে ছেলেসন্তানের মা হয়েছেন। কিন্তু আমাদের দুঃসময়ে তাদের কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। তাই এখন মন চাইলেও মাথা সায় দেয় না সমাজকর্মে।
.
সেই পিসিও মাঝে মাঝেই ওষুধ নিয়ে টাকা না দিয়ে চলে যান। আজকেও ১০টাকা নিয়ে এসেছেন। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন তুমি টাকা চাও না? মা বললো, ওর স্বামী তোকে খুব ভালোবাসতো। তোর বাবা থাকতে তুই চুল কাটাতে গেলেই কাটানো শেষে তোর জন্য খাবার কিছু নিয়ে আসতো। আমি বললাম, সে হয়তো বাবা তার কোনো বড় উপকার করেছিলেন তাই। মা বলে, ওর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলেটা চুল কাটিয়ে ভালো পয়সা পেলেও মাকে দেখে না। খুব কষ্টে সে একটা এনজিওতে চাকরি করে খায়। ওর মতো আমিও তো একটা সময় খুব কষ্টে কাটিয়েছি, তাই আসলে আর না করতে পারি না। কষ্টের দিনেই ফিরাই নাই, আর এখন তো তুই চাকরি করিস! পাশের আরেক মহিলা ডাক্তারের কাছে যেতে বললেও যায় না, কারণ ঐ ওষুধে নাকি কাজ হয় না এবং ডাকাতি দাম রাখে।
.
এই কথা শোনার পর আমার কী করা উচিত আমি বুঝতে পারছি না। মাকে বললাম, ১০ টাকা দিয়ে তো অটোতে আসা-যাওয়ার খরচ হবে, বাকিটা? মা বললো, থাক বাবা, এনে দিস। এই বলে মা তাকে ওষুধ খাইয়ে দিলেন একটু, বাকিটা কাল এনে দিতে হবে। আমাদের কথা মনে হয় তিনি শুনে ফেলেছেন দূর থেকে। তাই যাবার আগে মাকে বলে গেলেন, বাকি টাকা ওষুধ নেওয়ার সময় দিয়ে যাবেন।
.
সেই থেকে আমার মনটা খারাপ হয়ে আছে।
আচ্ছা, আমি কি অনেক বড় পাপ করে ফেললাম?

Saturday, January 12, 2019

শফী হুজুর, জাতির কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত

হুজুর ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে পাঠানো যাবে না। পরক্ষণেই আরেকটু দয়া দেখিয়ে তিনি বলেছেন, যদি দিতেই হয়, তবে বড়জোর ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়ানো যেতে পারে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বরং জুম্মা নামাজ শেষে ১৫ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীকে তিনি এই কথার ওয়াদা করিয়ে তবে ছেড়েছেন! (সূত্রঃ সমকাল)
.
এখন, এই ১৫ হাজার লোকের প্রত্যেকের যদি একটি করেও মেয়ে থাকে আর তারা যদি ওয়াদা পালন করেন অক্ষরে অক্ষরে, তবে এদেশে রোহিঙ্গাদের মতো আরও ১৫ হাজার অশিক্ষিত মা তৈরি হবে, যাদের কাজ হবে শুধু ঘরের চার দেয়ালের ভেতর থেকে একের পর এক সন্তান জন্ম দেওয়া, তারপর তাদেরকে আধুনিক সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পেরে অনেকটা নির্বোধ বানিয়ে গড়ে তোলা। এমনিতেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পেট থেকে এই বছরেই শুধু ৫০ হাজার সন্তান আসছে বলে জানা গেছে। তারা শুধু পরের দেওয়া ভিক্ষারটা খাওয়া ঘুমানো আর সন্তান জন্ম দেওয়া ছাড়া আর কিছু করে কিনা জানা নেই। জন্মনিরোধী পিল দিলেও নাকি তারা সেটা ছুড়ে ফেলে দেয়! কী চমৎকার, আমরাও মনে হয় ওদের মতো অকর্মণ্য হয়েই বেড়ে উঠতে দেখতে যাচ্ছি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে!
.
আজকালকার মেয়েদেরকে জানতে টিভি দেখতে বলে মুরুব্বি আরও বলেছেন, ক্লাস ফোর-ফাইভের বেশি পড়াইলে নাকি মেয়ে আর তার বাপের থাকবে না, 'টানাটানি করে অন্য পুরুষ তাকে নিয়ে চলে যাবে'! কথাটা শুনেই কেমন গা জ্বলে উঠলো। ভদ্র সমাজে ভেগে যাওয়া বলতে বুঝি, এক পুরুষ (স্বামী) কে ছেড়ে অন্য পুরুষের সাথে ভেগে যাওয়া। কিন্তু বাবার থেকে আবার 'অন্য পুরুষ' নিয়ে যায় কীভাবে?
.
এই মুরুব্বির লোকজন যখন ঢাকা দখল করতে এসে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলো, আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তখন কড়া ভাষায় তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বিনয় আর ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভাবা ঠিক না। তিনি তাদেরকে পালটা আল্টিমেটাম দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, সময় থাকতে ফিরে না গেলে আগামীতে ঘর থেকেই বের হতে দেওয়া হবে না। কী দারুণ নিপাট ভদ্রলোকটি দেশের প্রয়োজনে কী ভীষণ হুংকারটিই না দিতে পেরেছিলেন!
.
আজ সৈয়দ আশরাফ নেই। তাঁর মতো একজনকে খুব মিস করি, যিনি কড়া ভাষায় তাকে জবাব দিতে পারবেন, যিনি দেশকে আবার সেই বেগম রোকেয়ার 'অবরোধবাসিনী'র যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। যে দেশে একজন মহিলা রেকর্ড চতুর্থবার দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর মানুষ হয়েছেন স্বীয় যোগ্যতায়, যে দেশের স্পীকার একজন মহিলা, সে দেশে কী স্বাভাবিকভাবেই না এখানে এসব কথা বলেও পাড় পেয়ে যাওয়া যায়! হিসেবটা মনে হয় খুব জটিল। তাদেরকেই আজকাল বেশি দরকার মনে হয় আমাদের!
.
হুজুর, জাতির কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।