খুঁজুন

Saturday, January 12, 2019

শফী হুজুর, জাতির কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত

হুজুর ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে পাঠানো যাবে না। পরক্ষণেই আরেকটু দয়া দেখিয়ে তিনি বলেছেন, যদি দিতেই হয়, তবে বড়জোর ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়ানো যেতে পারে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বরং জুম্মা নামাজ শেষে ১৫ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীকে তিনি এই কথার ওয়াদা করিয়ে তবে ছেড়েছেন! (সূত্রঃ সমকাল)
.
এখন, এই ১৫ হাজার লোকের প্রত্যেকের যদি একটি করেও মেয়ে থাকে আর তারা যদি ওয়াদা পালন করেন অক্ষরে অক্ষরে, তবে এদেশে রোহিঙ্গাদের মতো আরও ১৫ হাজার অশিক্ষিত মা তৈরি হবে, যাদের কাজ হবে শুধু ঘরের চার দেয়ালের ভেতর থেকে একের পর এক সন্তান জন্ম দেওয়া, তারপর তাদেরকে আধুনিক সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পেরে অনেকটা নির্বোধ বানিয়ে গড়ে তোলা। এমনিতেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পেট থেকে এই বছরেই শুধু ৫০ হাজার সন্তান আসছে বলে জানা গেছে। তারা শুধু পরের দেওয়া ভিক্ষারটা খাওয়া ঘুমানো আর সন্তান জন্ম দেওয়া ছাড়া আর কিছু করে কিনা জানা নেই। জন্মনিরোধী পিল দিলেও নাকি তারা সেটা ছুড়ে ফেলে দেয়! কী চমৎকার, আমরাও মনে হয় ওদের মতো অকর্মণ্য হয়েই বেড়ে উঠতে দেখতে যাচ্ছি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে!
.
আজকালকার মেয়েদেরকে জানতে টিভি দেখতে বলে মুরুব্বি আরও বলেছেন, ক্লাস ফোর-ফাইভের বেশি পড়াইলে নাকি মেয়ে আর তার বাপের থাকবে না, 'টানাটানি করে অন্য পুরুষ তাকে নিয়ে চলে যাবে'! কথাটা শুনেই কেমন গা জ্বলে উঠলো। ভদ্র সমাজে ভেগে যাওয়া বলতে বুঝি, এক পুরুষ (স্বামী) কে ছেড়ে অন্য পুরুষের সাথে ভেগে যাওয়া। কিন্তু বাবার থেকে আবার 'অন্য পুরুষ' নিয়ে যায় কীভাবে?
.
এই মুরুব্বির লোকজন যখন ঢাকা দখল করতে এসে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলো, আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তখন কড়া ভাষায় তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বিনয় আর ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভাবা ঠিক না। তিনি তাদেরকে পালটা আল্টিমেটাম দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, সময় থাকতে ফিরে না গেলে আগামীতে ঘর থেকেই বের হতে দেওয়া হবে না। কী দারুণ নিপাট ভদ্রলোকটি দেশের প্রয়োজনে কী ভীষণ হুংকারটিই না দিতে পেরেছিলেন!
.
আজ সৈয়দ আশরাফ নেই। তাঁর মতো একজনকে খুব মিস করি, যিনি কড়া ভাষায় তাকে জবাব দিতে পারবেন, যিনি দেশকে আবার সেই বেগম রোকেয়ার 'অবরোধবাসিনী'র যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। যে দেশে একজন মহিলা রেকর্ড চতুর্থবার দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর মানুষ হয়েছেন স্বীয় যোগ্যতায়, যে দেশের স্পীকার একজন মহিলা, সে দেশে কী স্বাভাবিকভাবেই না এখানে এসব কথা বলেও পাড় পেয়ে যাওয়া যায়! হিসেবটা মনে হয় খুব জটিল। তাদেরকেই আজকাল বেশি দরকার মনে হয় আমাদের!
.
হুজুর, জাতির কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।

No comments:

Post a Comment