খুঁজুন

Sunday, November 17, 2019

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ রোধে করণীয়

আমি বলে দেই কেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। শুনবেন? হয় আপনার ভুলের কারণেই এবং সবকিছু মেনে নেওয়ার প্রবণতা থেকেই। হ্যাঁ, নিচের কথার সাথে মিলিয়ে দেখুন ঠিক কিনা।

দোকান থেকে আপনাকে যে সিলিন্ডারটি দিয়ে যায়, সেটি পুরাতন কিনা বা মরিচা ধরা কিনা, কোথাও ছিদ্র আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখুন। আমার ধারণা আপনি অতো দেখতে যান না। পুরাতন বা মরিচা ধরা সিলিন্ডারটিই আপনি মেনে নেন।

সিলিন্ডারের এই দশা কিন্তু এমনিতে হয়নি, হয়েছে অব্যবস্থাপনার কারণে। খালি সিলিন্ডার কিভাবে আছাড় দিয়ে ফেলা হয় আনা-নেওয়ার সময় কিংবা গ্যাস ভরার আগে, সেটা দেখলেই বুঝবেন। উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় গ্যাসসহ এসব সিলিন্ডার, অথচ আনা-নেওয়ায় যত্ন করা হয় কম, কাজেই থেকে যায় ঝুঁকি। 

তাই এখন থেকে দোকান থেকে সিলিন্ডার দিয়ে গেলে পুরাতন মরিচা ধরা সিলিন্ডার নেওয়া বাদ দিন। নতুন সিলিন্ডার দিতে বলুন। না দিলে অন্য দোকান থেকে নিন। এই প্রতিবাদ প্রতিটা জেলায় শুরু করেন, দেখবেন তারা বাধ্য হবে নতুন সিলিন্ডার দিতে এবং যত্ন করতে। আমি সবসময় নতুন সিলিন্ডার দেখে নেই। উচ্চদাম নিয়েও প্রতিবাদ জানাতে বলতাম, কিন্তু আমি জানি আপনারা কেউ সেটা করবেন না। মেনে নিয়েছেন সবাই।

তারপর লক্ষ্য করুন আপনার গ্যাসের পাইপে কোথাও ছিদ্র আছে কিনা। কিভাবে বুঝবেন? সিলিন্ডার থেকে পাইপ হয়ে গ্যাস যাওয়ার পথে কোথাও ছিদ্র থাকলে গ্যাস বাইরে বেরিয়ে যাবে। সিলিন্ডারের সুইচ অন করলেই (নিচের দিকে দিলেই) গ্যাস বের হবে, কিন্তু গ্যাসের চুলার সুইচ অন না করলে সেই গ্যাস নাকে লাগার কথা না। যদি লাগে, তাহলে বুঝবেন কোথাও ছিদ্র বা লিকেজ আছে। সেটা খুঁজে বের করতে মেকানিক ডাকুন। এটা জরুরি। ছিদ্র বন্ধ করার আগেই রান্না করতে যাবেন না।

মাঝে মাঝে রেগুলেটর পুরাতন হয়ে যায় অথবা বাইরে ঠিকঠাক দেখালেও ভেতরের পিনটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওখান দিয়েও গ্যাস বের হয়। ওটা দিয়ে সিলিন্ডারের সুইচ উপরে উঠালে বা গ্যাস নির্গমণ বন্ধ করলেও পিন নষ্টের কারণে গ্যাস বের হতেই থাকে।

একটু দামী হলেও নিরাপত্তার বিবেচনায় গ্যাসের চুলা কিনবেন অটোমেটিক দেখে। ম্যাচ দিয়ে জ্বালাতে হয় এমনটা না কেনাই ভালো। লিকেজ থাকলে ঘর গ্যাসে ভরে থাকবে এবং ম্যাচের কাঠি জ্বাললেই বিস্ফোরণ ঘটবে। আমার বাসার গ্যাসের চুলা প্রায় ১৫-১৭ বছরের পুরাতন। কিন্তু অটোমেটিক। চুলায় চুইচ দিলে অটোমেটিক সুইচের নিচের কাঠির ঘর্ষণের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে গ্যাসের চুলা জ্বলে ওঠে।

গ্যাসের সিলিন্ডারের আশেপাশে কাছাকাছি বা গা ঘেঁষে কোনো গরম বা রান্না করা কিছু রাখবেন না। এসব গরম বস্তুর স্পর্শে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে পারে।

আমার বাসার গ্যাসের চুলাটি আছে একটি ইট-সিমেন্টের তাকে উপর, আর সিলিন্ডার রাখার জায়গা তার নিচে। অর্থাৎ গ্যাসের চুলা আর সিলিন্ডারের মাঝে শক্ত তাপ কুপরিবাহী দেয়াল আছে। এটার কারণে গ্যাসের চুলার আগুণ বা গরম কিছুতেই সিলিন্ডারের গায়ে লাগে না। আমার বাবা(কবি বাবু ফরিদী)-কে ধন্যবাদ, এমন সুন্দর নিরাপদ ব্যবস্থাপনা রেখে যাওয়ার জন্য। সুতরাং গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডারের মাঝে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

গ্যাসের চুলায় দুধ বা অন্য কিছু চড়িয়ে দিয়ে অন্য কাজে মন দিবেন না। আপনার আসতে দেরী হলে বা অন্যমনস্ক হয়ে ভুলে গেলে দুধ উতলে উঠে গ্যাসের আগুনে পড়বে এবং সেই গরম দুধ সিলিন্ডারের গায়ে কোনোভাবে লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গ্যাসের চুলায় রান্না করার সময় দরজা-জানালা খুলে রাখবেন যাতে হাওয়া আসা-যাওয়া করে ঘরে। এতে লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হয়ে থাকলেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

রান্না শেষে সবসময় সিলিন্ডারের চাবি উপরে উঠিয়ে গ্যাস বের হওয়া বন্ধ করে যেতে ভুলবেন না। একটু অসাবধানতা বা সতর্কতা ও আলসেমির কারণেও আপনার ও আপনার পরিবারের জীবন যেতে পারে। তাই সতর্ক হোন। এমনিতেও আপনি পত্রিকা পড়লেই বুঝবেন মৃত্যু কীভাবে হাজারটা ফাঁদ পেতে আমাদের আশপাশে অপেক্ষা করছে..

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী

No comments:

Post a Comment