খুঁজুন

Sunday, May 12, 2024

মোজো কি মার্কেট আউট?

 শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে অখাদ্য খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিলো, তাতে তো বিক্রি বাড়ার কথা, সাপ্লাই বাড়ার কথা দাম বাড়িয়ে হলেও! তাদের তো আক্ষরিক অর্থেই আসমানে পাখা মেলার কথা ছিলো! তাহলে না বেড়ে কমছে কেন? সমস্যাটা কী?

প্রথমত, ফিলিস্তিনিদেরকে ১ টাকা করে দেওয়ার কথা বলে বেচলেও আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে এক টাকা দেওয়ার কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। এটা প্রায় অসম্ভব, কারণ ফিলিস্তিনে কোনো সরকার নেই। সরকার না থাকলে তারা টাকা দেবে কাদের কাছে? হামাসের কাছে? না, হামাসের মতো সংগঠনের সাথে টাকার লেনদেন দিনের আলোতে করা সম্ভব না। তা হলে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে আকিজ গ্রুপ তথা বাংলাদেশ। আবার নিজেরা টাকা নিয়ে গিয়ে ফিলিস্তিনে দিয়ে আসাও সম্ভব না, কারণ সেটা এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা, যুদ্ধের মধ্যে কে যাবে মরতে? ফ্রান্স ফিলিস্তিনে সহায়তা দিচ্ছে বিমান থেকে নিচে ফেলে, সেটাও আকিজ গ্রুপ করেনি। আবার জাতিসংঘের মাধ্যমেও দেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। কাজেই, ফিলিস্তিনিদের দেওয়ার কথা বলে তারা যে ধার্মিকদের আবেগকে কাজে লাগাচ্ছে, এটা সাধারণ জনগণ দেরীতে হলেও বুঝতে শুরু করেছে।
দ্বিতীয়ত, স্বাদের দিক দিয়ে কোনোকিছুই Coca-Colaর বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি, পারবেও না। সূর্যের বিকল্প সূর্য হয় না, চাঁদের বিকল্পও চাঁদ হয় না। তাই যারা আসলেই নিজের কষ্টার্জিত টাকায় ভালো কিছু খেতে চায়, তারা কোকই খাচ্ছে। তবে এটাও বলা দরকার যে বাংলাদেশের কোক আর ভারতের কোকের স্বাদে পার্থক্য আছে। এখানে ঝাঁজ কম, ওখানে বেশী। সেক্ষেত্রে কোকের উচিত মানোন্নয়নের দিকেও নজর দেওয়া।
তৃতীয়ত, স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই গানবাজনা হারাম বলে প্রচার চালানো হলেও এই দেশ থেকে গানবাজনাকে ঝেটিয়ে বিদায় করা সম্ভব হয়নি, হবেও না কোনোদিন। তাই যারা গানবাজনা পছন্দ করে, তারা Coke Studio বাংলা এর বাংলা গানকে পুনরুজ্জীবীত করে বিশ্বের দরবারে আরও জনপ্রিয় করে তোলার কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ কোক খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এই যেমন আমি! অপেক্ষায় থাকি কবে অর্ণবদা নতুন 'রিয়েল ম্যাজিক' নিয়ে হাজির হচ্ছেন তার জন্য।
চতুর্থত, বয়কটিদের আসর উদ্দেশ্য কোক, স্প্রাইট, সেভেন আপ ইত্যাদিকে মার্কেট থেকে হটানোই শুধু নয়, নিজেদের মুসলিম দেশ থেকে আনা 'পামির কোলা'র মতো ড্রিংক বাজারে ছড়ানো। ফলে ঐসব ড্রিংক মোজো কিছুটা মার্কেট দখলে নিয়েছে বলে কৃত্রিমভাবে কিছুকিছু জায়গায় মোজো কম নিচ্ছে আর বলছে সাপ্লাই কম।
পঞ্চমত, যা শোনা যাচ্ছে তা হলো, মোজোর প্ল্যাস্টিকের বোতলটার সাপ্লাই আসতো প্রাণ-আর,এফ,এল গ্রুপ থেকে। কিছুদিন যাবৎ সেই সাপ্লাইয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এটা হতে পারে তিন কারণে। এক-- আসলেই কোম্পানিটির উৎপাদন কম হচ্ছে বিধায় সাপ্লাই দিতে পারছে কম। দুই-- বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মোজোর একচেটিয়া রাজত্বের সময়ে বোতলের দাম বেশী চাইছে তারা, যা দিতে রাজি হচ্ছে না মোজো। তিন-- প্রাণের পণ্য ভারতে ভালোই ব্যবসা করছে। চানাচুর থেকে শুরু করে চিপসের বিশাল ব্যবসা তাদের ভারতে। আকিজের ইন্ধনে পিনাকীদের ভারত বয়কট আন্দোলনে মোজোর বোতল সাপ্লাইয়ার তাই হয়তো ভারতের চাপে আছে, আশংকায় আছে ভারতে নিজেরাই বয়কটের শিকার হওয়ার। তাছাড়া প্রাণকে কাদিয়ানীদের পণ্য বলে সেটা বয়কটের ডাকও কোনো কোনো ব্যক্তি দিয়েছে। ফলে এই সুযোগে হয়তো প্রাণ নিজেদের ড্রিংক ব্যবসাকেই এগিয়ে নিতে চাইছে মোজোকে বোতল না দিয়ে।
কারণ যা-ই হোক, আমরা আমাদের কষ্টার্জিত টাকায় বাজারে যেটা অপেক্ষাকৃত ভালো মানের পাব, হোক তা দেশী বা বিদেশী, তাই কিনে খাব। দেশী বলেই নিম্নমানের বাইক-ট্রাক রাস্তায় নামাবো না, বাইরের অপেক্ষাকৃত ভালোটাই কিনবো। এইচপি, ডেল, ম্যাকবুকের জায়গা কি দোয়েল নিতে পেরেছে? পারেনি। তবে যেসব পণ্য বাইরের চেয়ে আমরা নিজেরাই ভালো বানাই, তা আমরা অবশ্যই কিনে ব্যবহার করবো।

Sunday, October 3, 2021

প্রসঙ্গ: বিদেশী চ্যানেল বন্ধ-- দ্বার বন্ধ করে কি ভ্রমটাকে রুখে দেয়া যাবে?

 মনে হচ্ছে যেন সেই আলিফ লায়লার যুগে ফিরে গেছি! 

 

"কতসব নতুন কাহিনী,

মনভরে দেয় তার বাণী!

কতযুগ পেরিয়ে গেছে,

তবু নতুন রয়ে গেছে..."


ঝিরঝির চ্যানেলের তুলনায় ৫ মিনিটের বিজ্ঞাপনের পর ২-৩ মিনিট নাটক/সিনেমা/খবর! সেই ভালো, সেই ভালো! এত চ্যানেল কেন! শুধু বিটিভি কেন নয়?


--এমনটা বলে বেশ কিছু হাহা রিয়্যাক্ট আমি আদায় করতেই পারতাম। কিন্তু ভাঁড় হতে কেন যেন ইচ্ছা করছে না আমার আজ। বিদেশী চ্যানেল বন্ধের কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ পাচ্ছি না আমি। সিরিয়ালের বিরুদ্ধে আমিও, কিন্তু সেটা চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে নয়। ঐ চ্যানেলগুলো দেখে যেমন ঝগড়া শেখা যায়, আবার এটাও ঠিক যে ঐ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ঘরে অনেক ঝগড়া-অশান্তি কমেও আসে। 


খেলা? খেলা বাদ? শুধু একটি দেশী চ্যানেল দেখব এই ডিজিটাল যুগে? আর ডিসকভারি/ ন্যাট জিও চ্যানেল? দেখব না? বাচ্চারা কার্টুন দেখবে না? ভিন্ন ভাষার চ্যানেল দেখব না, ভিন্ন কালচারের সাথে পরিচিত হব না? নতুন কিছু শিখব কীভাবে? ভালো কিছু করার প্রতিযোগী মনভাবে আসবে কী করে যদি 'দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি'? 


আচ্ছা, বিবিসি, সিএনএনও দেখবো না? আমাদের ইংরেজি উচ্চারণ, শোনা, বলা --এসব ফ্লুয়েন্ট করার সস্তা এই পথটাও বন্ধ থাকবে? কেন? এসব চ্যানেলের কী দোষ? 


মূল দাবিটা কী? বিদেশী চ্যানেল আমাদের দেশে দেখাতে হলে বিজ্ঞাপনের জন্য আমাদেরকে টাকা দিতে হবে? বেশ ভালো কথা। তেমনটা হলে আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। দেশ উন্নত হবে আরও। কিন্তু তারা যদি না দেয়, যদি বলে থাকো তোমরা একজন ঘরে হয়ে.. দেইখো না আমাদের চ্যানেল, যদি ঘরে ঘরে গিন্নীরা বিদ্রোহ শুরু করে, যদি টিভিতে সিরিয়াল-সিনেমা-খেলা-নাটক নিয়ে ব্যস্ত মানুষগুলো বিনোদনের অভাবে এই করোনাকালে গৃহবন্দী হয়ে আত্মঘাতি হয়ে ওঠে? সেই শুধু বিটিভির যুগের মতো আমাদের নাট্যশালা, প্রেক্ষাগৃহ বা সিনেমাহলগুলো অতোটা মুখরিত নয় এখন; সেই আমলের মতো মানের ছবি, নাটকও কতটা দেখতে পাই আমরা তা নিয়ে মতভেদ আছে। তাহলে মানুষ যাবে কোথায়, দেখবে কী আর মনটা ভালো রাখবে কী করে হাজারটা সমস্যাময় জীবনে?


নাকি সমস্যাটা বিদেশী সংস্কৃতি, ভাষা আর খোলামেলা পোশাকে? আমরা কি দেশটাকে আফগানিস্তান বানাতে চাইছি? নিশ্চয়ই না? আচ্ছা, পর্ণসাইট বন্ধ করে কি সেগুলো দেখা ঠেকানো গেছে? ভিপিএন কি উধাউ হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে? ইয়াং জেনারেশন কি ভিপিএন দিয়ে পাবজি খেলছে না? অবিবাহিত তরুণ ইন্টারনেটে কিছু দেখবে না, টিভিতেও কিঞ্চিত খোলামেলা পোশাক দেখবে না, তাহলে কী করবে? পাশের বাড়িতে গিয়ে ঝাপ দেবে, নাকি ধানক্ষেতে গিয়ে অপেক্ষা করবে? নাকি এগুলো বন্ধ করলেই তাদের যৌন চাহিদা কমে যাবে? নাকি আমরা চাইছি বাল্যবিবাহকে প্রমোট করে দেশকে জনসংখ্যার ঘনত্বে ১নং থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশে উন্নীত করতে? 


একইভাবে বর্ডার দিয়ে অবৈধভাবে মোবাইল সেট যাতায়াত বন্ধ না করে শুধু নিবন্ধনের নামে সেটপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করালে দেশ প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে যাবে। কেননা এত দাম দিয়ে উন্নত প্রযুক্তির পণ্য কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। নিবন্ধনে জোর দিতেই হয় যদি, এসব পণ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখা ভালো। আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ারও কোনো বিকল্প নেই। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সমাজের আয়না। এগুলোকেও একেবারে বন্ধ করা উচিত হবে না। 


বৈশ্বায়নের এই যুগে তথ্যপ্রবাহ, সংস্কৃতির আদান-প্রদান, বিনোদন, প্রযুক্তি, ভাষা ইত্যাদিকে সীমিত করে কোনো জাতি উন্নতির শিখরে উন্নীত হতে পারবে না, একঘরে হয়ে থাকতে হবে। অন্যদের চ্যানেল আমরা না দেখলে, অন্যদের পণ্য আমরা না কিনলে ওরাও আমাদের চ্যানেল দেখতে ও পণ্য কিনতে উৎসাহী হবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমাদের বরং কীভাবে অন্যদের চেয়েও ভালো মানের শিক্ষণীয়, বিনোদনমূলক, নিউজ বেইজড চ্যানেলগুলো তৈরী করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশীয় সিনেমাহলগুলোতেও বিদেশী সিনেমা দেখালে প্রতিযোগিতা বাড়বে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, প্রকৃত গুণীজনের মূল্যায়ন করতে হবে। ভালো কাজ হলে বাইরের দেশেও আমাদের চ্যানেল দেখবে। যেমনটা দেখে ওরা আমাদের মোশাররফ করিম-চঞ্চল চৌধুরীর নাটক ইউটিউবে। ইউটিউব, নেটফ্লিক্স যেমন চালু রাখতে হবে, তেমনি চরকি, বায়োস্কোপ, হইচই ইত্যাদিও চালু থাকবে। যার বিজ্ঞাপন দেখতে আপত্তি নাই সে টিভি চ্যানেল দেখবে (বিজ্ঞাপনের মাত্রাও কমিয়ে আনা আবশ্যক, কেননা বিজ্ঞাপন বিরতি আজকাল বিজ্ঞাপন বিরক্তির কারণ হয়), যে বিজ্ঞাপনে আগ্রহী নয় সে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই দেখবে। প্রয়োজনে ভালো আর মন্দের, উত্তম আর অধমের পার্থক্য বুঝিয়ে দিতে হবে, কিন্তু কিছুতেই ব্যাক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।


শেষ কথা হল, বিদেশী চ্যানেল বন্ধ নয়, বরং কীভাবে কেবল সেবার মান আরও উন্নত ও গ্রাহকবান্ধব করা যায় সেদিকে মনযোগ দিতে হবে। সারা বিশ্বের খবর, বিনোদন, সংস্কৃতি ইত্যাদির অবাধ প্রবাহ থাকতে হবে দেশে। সুস্থ বিনোদনের উৎসগুলোকে সচল রাখতে হবে। 'অসুস্থ' বলেও মৌলবাদী, আফগানি চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে না। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাঙালিরা যেই সংস্কৃতিকে লালন করে আসছে, তার চর্চা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অন্য সংস্কৃতিগুলিকেও দেখার ও জানার সুযোগ রাখতে হবে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রালগ্নে আমরা আফগানিস্তানের পথে নয়, বরং ইউরোপ-আমেরিকা, রাশিয়া-ভারতের পথে হাঁটতে চাই। 

জয় বাংলা।


লেখা: দেব দুলাল গুহ।

Friday, April 23, 2021

লকডাউন বাস্তবায়নে আমি যা করতাম: দেব দুলাল গুহ

১. শপিং মল ও দোকান খোলা থাকলে থাক, কিন্তু আমি যাব না। বেঁচে থাকলে করোনাকালের পরেও নতুন কাপড় পরতে পারবো। কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে এবারই হবে শেষ নতুন জামাকাপড় পরা। তাই, যারা দলবেঁধে কেনাকাটা করতে যাবেন, তারা একসাথে কাফনের কাপড়টাও কিনে নিয়ে আসলে সুলভে কিছুটা ছাড়ে পেলেও পেতে পারেন। কিনে রাখেন, অতি দ্রুতই কাজে লাগবে। শুধু নিজের জন্য না, পরিবারের প্রত্যেকের জন্য একটি কিনবেন। সাথে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা তুলে বাসার খোলামেলা কোনো একটা জায়গায় রেখে দিবেন। কেননা, যদি আপনি ও আপনার পরিবারের সবাই শ্বাসকষ্টে ভুগে মরে থাকেন বাসায়, যাতে কেউ অন্তত আপনাদের দাফনের কাজটা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে রাখাই ভালো। কাজেই, ঈদের শপিং করতে বের হলে এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করে বের হবেন। ঠিক আছে?


 .

২. এখানে সরকারের দোষ দেওয়া যাবে না। দোকানমালিকদের দাবির মুখেই খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তাদের নাকি জীবিকা হুমকির মুখে! আমার মনে হয় না বাংলাদেশে এত গরিব দোকানদার বা ব্যবসায়ী আছেন, যারা অন্তত দুইটা সপ্তাহ কোনোমতে ডাল আর আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে ঘরে থাকতে পারবেন না। দোকানের কর্মচারীদের দুই সপ্তাহের খোরাক দেওয়াটা তাদের দায়িত্ব। তবে এক্ষেত্রে সরকারেরও দায় আছে। লকডাউনের আগে এইসব শ্রমিক, রিক্সাচালক, কর্মচারীদেরকে দুই সপ্তাহের রেশন দিয়ে তারপর ঘরে থাকতে বললে লকডাউন আরও ভালো কার্যকর হতো বলে মনে করি। বাংলাদেশের এখন সে সামর্থ আছে। প্রতিটি এলাকার সামর্থবান মানুষরাও এগিয়ে আসতে পারতেন। দানে সম্পদ কমে না, বরং বাড়ে। ঠিক কিনা? 

.

৩. আমি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকলে সবার আগে দেশের নাগরিকদের একটা নির্ভুল তালিকা (ডেটাবেজ) করতাম এনআইডি কার্ড দেখে। কার্ডে সবার পেশার নির্ভুল তথ্য রাখা নিশ্চিত করতাম। নিশ্চয়ই প্রায় সবারই বর্তমানে সিমকার্ড আছে। প্রতিটি সিম থেকে নগদ বা বিকাশ এ্যাকাউন্ট খুলাতাম। নিশ্চিত করতাম এক আইডি দিয়ে একাধিক এ্যাকাউন্ট যাতে খোলা না হয়। এরপর খেটে খাওয়া অসচ্ছল পরিবারের অন্তত একজনের একাউন্টে দুই সপ্তাহের খোরাকি ভাতা পাঠিয়ে দিতাম। সরকারি তহবিল থেকে এতো টাকার যোগান দেওয়া সম্ভব নাহলে সামর্থবান ব্যবসায়ী, দলীয় নেতা, বিত্তবানদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটা ফান্ড করতাম। খুব কঠিন কাজ নয় এটা। ইচ্ছা, সততা ও আন্তরিকতা থাকলেই সম্ভব। এভাবে দিলে দুর্নীতি করার বা মেরে খাওয়ার সুযোগ কম থাকবে। এরপরেও একটা হটলাইন থাকবে, যেখানে কেউ না পেলে এনআইডি নম্বরসহ অভিযোগ দেবে। এভাবে আগে সহায়তা দিয়ে তারপর লকডাউন দিলে সবাই সেটা মানতো। না মানলে আমি কড়া ব্যবস্থাও নিতে পারতাম। এই মুহূর্তে কড়া লকডাউনের বিকল্প নেই। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরার, বাকি সময় ঘরে থাকার বিকল্প নাই। প্রয়োজনে পুলিশ কেন, সেনাও নামাতে পারবেন এরপর না মানলে। কিন্তু এখন ফাঁকিবাজটাও পুলিশ ধরলে বলবে কেনাকাটা করতে যাচ্ছি অথবা বলবে ঘরে বসে থাকলে খাব কি তাই জীবিকার সন্ধানে বের হয়েছি। তখন আর এসব বলার সুযোগ পাবে না। বললেই এনআইডি চেক করে বলা যাবে, আপনি না দুদিন আগেই ভাতা নিলেন? লকডাউনের আগে এই টাকায় কেনাকাটা করেননি কেন? আরেকটা কাজ করতাম, মাস্কের বিরুদ্ধে যারাই বয়ান দেবে, যারাই করোনাভাইরাসকে পাত্তা না দিয়ে বয়ান দেবে, তাদেরকেই সাথে সাথে আইনের আওতায় আনতাম। এভাবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ বা এক মাসের কঠোর লকডাউন দিলে করোনার প্রকোপ কমে আসতো। 

.

৪. যেভাবে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, মাস্ক ছাড়া যেভাবে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে তা দেখে শংকা হয়-- হয়তো বাঙালি জাতিটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এভাবে চলতে থাকলে! কেননা সচেতন মানুষও একদিন না একদিন তাদের দ্বারা আক্রান্ত হবেই। কেননা করোনা শুধু ড্রপলেটের মাধ্যমে নয়, বরং করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ভেসে ভেসে দূরদূরান্তে ছড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই বাইরের দেশগুলো আমাদেরকে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেবে। আমাদের বাণিজ্য, পড়ালেখা, ভ্রমণ সব নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। কারণ কেউই খাল কেটে কুমির (ভিসা দিয়ে ভাইরাস) আনতে চাইবে না। 

.

৫. খুব আশার খবর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়া তাদের টিকা স্পুটনিক-ভি উৎপাদনের ফর্মুলা আমাদেরকে দিতে রাজি হয়েছে। আমরা যৌথ মালিকানায় আমাদের দেশে টিকা উৎপাদন করতে পারবো, দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা রপ্তানি করে রাশিয়াকে লভ্যাংশ দিয়ে নিজেরাও লাভ করতে পারবো। এটাই আমাদের লাভ। আর এখানে রাশিয়ার লাভ আমাদের দিয়ে টিকা উৎপাদন করিয়ে নেওয়া৷ কেননা আমাদের সস্তা শ্রমিক আছে, ঔষধশিল্পে আমরা অনেক এগিয়ে। দ্রুত উৎপাদনে যাওয়া গেলে দ্রুত নিজেরাও নিরাপদ হতে পারবো, রপ্তানি করে আয়ও করতে পারবো। রাশিয়ার এই টিকার দাম প্রতিটি ১০ থেকে ২৭ ডলার, কার্যকারিতা ৯১.৬%। যেখানে অক্সফোর্ড -এ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা যা ভারতের সেরাম উৎপাদন করছে, তার দাম ৪ ডলার, কার্যকারিতা ৮১.৩০%। আবার চীনের সাথে মিলে এই অঞ্চলে টিকার মজুদ করতেও বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে, যা জরুরি প্রয়োজনে কাজে লাগবে। 

.

৬. টিকার মজুদ দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। আগে মানুষ টিকা নিতে অনাগ্রহী ছিলো নানা কারণে, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় যেমন ছিল, আবার ধর্মব্যবসায়ী মূর্খ বক্তাদের বিভ্রান্তিকর বক্তৃতাও ছিলো। এখন মানুষ বুঝতে পারছে টিকার আবশ্যকতা। তাই দ্রুত টিকা শেষ হচ্ছে। আমার মনে হয় টিকার এই সংকট হতো না যদি ভারত প্রতিশ্রুত টিকা সময়মতো দিতে পারতো। ভারত সেটা পারছে না, তার কারণ সবাই আগে নিজের উদরপূর্তি করে তারপর অন্যকে দেয়, তা সে যত বড় বন্ধুই হোক। নিশ্চয়ই যেকোনো চুক্তির মতো এই চুক্তিতেও কিছু টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন ছিল এবং নিজের প্রয়োজন না মিটিয়ে কাউকে দেবে না এমন কথাও হয়তো লেখা ছিল। তাই বাংলাদেশ ভারতকে বাধ্য করতে পারছে না। ঐদিকে ভারতেও হঠাৎ করোনার প্রকোপ বেড়েছে। ভোটের হাওয়ায় প্রচারণা একটা কারণ, ঐদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা এবং কুম্ভমেলার মতো লোকসমাগমও কারণ। যে কারণেই হোক, ভারতের নিজেদের নাগরিকদের জন্যই এখন টিকা দরকার। তারপরেও ভারত টিকা দিতো, মোদিকি নিজেই ডিরেক্ট অর্ডারে দিতেন। কিন্তু প্রথমত তিনি বাংলাদেশ সফরের সময় আমাদেরই একটা অংশ তাঁকে আসতে দেবো না বলে ও জ্বালাও-পোড়াও করে  তাঁকে ও তাঁর দেশকে অসম্মানিত করেছি।  এটা এখানে একটা বড় প্রভাব ফেলেছে বলে আমার মনে হয়। কেননা, যে পিএম করোনাকালের পর প্রথম বিদেশ সফরেই নিজের রাষ্ট্রীয় বিমানের প্রথম ফ্লাইটেই বাংলাদেশ এলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও যখন চেয়ে টিকা পাচ্ছিলো না তখন পেয়েছিলাম আমরা, পেয়েও সেই টিকার বদনাম করতেও ছাড়েনি আমাদেরই সেই অংশটি, গুজব রটিয়েছে ভারতের টিকায় শুকরের চর্বি আছে ইত্যাদি বলে! এখানে তাই বন্ধুত্ব নিয়ে টিটকারি করারও কিছু নেই, কেননা নিজের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখেই সবাই পরের জন্য করার চেষ্টা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও টিকা আটকে দিয়েছিল, বলেছিল আগে তাদের নাগরিকদের না দিয়ে বাইরে দেবে না। আমাদের ভাগ্য বরং ভালো যে ভারতেও ঐ টিকা উৎপাদন হচ্ছে এবং ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক বর্তমানে অন্য যেকোনো সময়ের(মুক্তিযুদ্ধ ও '৭৫ এর পর) চেয়ে ভালো। তাই দ্রুতই সঠিক সময়ে আমরা টিকা পেয়েছি। ভারতের পিএম ও সেনাপ্রধান এলেন ফ্রি টিকা উপহার হিসেবে নিয়ে, আর আমরা তাদেরকে আসম্মানিত করলাম। আমাদেরকে টিকা দিয়ে এমনিতেও নিজ দেশে বিরোধী দলের চাপের মুখে ছিলেন মোদিজি, বলা হচ্ছিল দেশের মানুষ পায় না আর তিনি বাইরে বিলাচ্ছেন! টিভি দেখেন, ভারতের করোনা মহামারির অবস্থা আসলেই ভয়াবহ। সুতরাং, সরকার খুবই ভালো কাজ করেছে রাশিয়ার টিকার উৎপাদনের চুক্তি করে। মানতেই হবে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এখন দ্রুত উৎপাদনে যাওয়া আবশ্যক। যতদিন তা করা যাচ্ছে না, ততদিন ভারতের থেকে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়া থেকেও ভ্যাক্সিন কিনে আনা দরকার। 

.

৭. কমপক্ষে ৮০% জনগণকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে টিকার আওতায় আনা গেলে করোনা থেকে মুক্তির আশা করা যাবে। তার আগ পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। বেঁচে থাকাটা জরুরি। বেঁচে থাকলে আবার অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে কি হবে যদি আমার মানুষই না বাঁচে? সহায়তা দিয়ে কঠোর লকডাউন, প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি, ভ্যাক্সিন কিনে এনে দ্রুতই ৮০% নাগরিককে দিয়ে ফেলা দরকার। আর সবকিছুর আগে দরকার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণে আনা, অর্থনীতকে সচল রাখা। সর্বোচ্চ নেতৃত্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একা সৎ, পরিশ্রমী, কর্মঠ হলে হবে না। মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী, নীতিবান লোকদের খুঁজে বের করে সঠিক চেয়ারে বসাতে হবে। 

তাহলেই করোনাকে ভয় নয়, করবো আমরা জয়।  

জয় বাংলা। 


দেব দুলাল গুহ নিপুণ

Wednesday, March 25, 2020

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ

'স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২০' উপলক্ষে দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

প্রিয় দেশবাসী।
আসসালামু আলাইকুম।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি ভাইবোনদেরও জানাই শুভেচ্ছা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশি রাষ্ট্র এবং জনগণ আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন, আমি তাঁদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।

আজকের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি আমাদের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।

শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জাতীয় চার নেতার প্রতি। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা।

১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি উপর গণহত্যা শুরু করে। আমি ২৫-এ মার্চের গণহত্যার শিকার সকল শহিদকে স্মরণ করছি।

আমি স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই - মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল - কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদকে।

প্রিয় দেশবাসী,
এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত।
ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড় - সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।জনসমাগম হয় এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সকল জেলায় শিশু সমাবেশ ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে আমরা মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি।

প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের স্বাধীনতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রাম এবং বহু ত্যাগ-তিক্ষিার ফসল।

১৯৪৮-৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়-দফা-১১-দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র নির্বাচনের পথ পেরিয়ে আমরা উপনীত হই ৭১’র ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে দাাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন: “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনাতর সংগ্রাম। জয় বাংলা”।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম স্তব্ধ করে দিতে ২৫-এ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির উপর অতর্কিত হত্যা শুরু করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি সামরিক শাসক তাঁকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ৯-মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনে।
পাকিস্তানের জেলে ১০-মাস বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। শুরু করেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন তিনি।

প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা, শহিদ পরিবার, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, তাঁদের প্রতিষ্ঠিত করা সমস্ত কাজই তিনি করেছিলেন এই সাড়ে তিন বছরে।
জাতির পিতা বলতেন: ‘‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।”

তিনি যখন দেশ পুনর্গঠনের কাজে নিমগ্ন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকেরা তাঁকে পরিবারের ১৮জন সদস্যসহ হত্যা করে। আমরা দুবোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই।

প্রিয় দেশবাসী,
আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা তাঁর ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে।
বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশ আজ খাদ্যশস্য, শাক-সবজি-মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে।
ঢাকায় মেট্রোরেল এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।

রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দোরগোড়ায় এখন আমরা। মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে।
গত বছর ৮.১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম।

কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন। আমাদের উপরও এই আঘাত আসতে পারে।

প্রিয় দেশবাসী,
এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।

গত জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল। এটি এখন বিশ্বের ১৯৫টির মধ্যে ১৬৯ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল পর্যন্ত ৪ লাখ ২২ হাজার ৮শোরও বেশি মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৮ হাজার ৯০৭ জন মানুষ মারা গেছেন। ১ লাখ ৯ হাজার ১০২ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে প্যানডামিক বা মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

প্রিয় দেশবাসী,
আমি জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাঁদের আত্মীয়স্বজন বিদেশে রয়েছেন, তাঁরাও তাঁদের নিকটজনদের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
আমি সকলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সঙ্কটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।
যাঁরা করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ - আপনাদের হোম কোয়ারেন্টাইন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।
মাত্র ১৪দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশি, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।

কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে। ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না।
করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না।

বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আই.ই.ডি.সি.আর-এর হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। এছাড়া সোসাইটি অব ডক্টরস তাদের ৫০০টি নম্বর উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ঐসব নম্বরে যোগাযোগ করুন। সরকার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেন।

তবে, আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে। সেজন্য আপনার পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষটির প্রতি বেশি নজর দিন। তাঁকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। তাঁকে ভাইরাসমুক্ত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়। সব সময় খেয়াল রাখুন আপনি, আপনার পরিবারের সদস্যগণ এবং আপনার প্রতিবেশিরা যেন সংক্রমিত না হন।
আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে। 

প্রিয় দেশবাসী,
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ২টি সমুদ্র বন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনসহ সকল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮১ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

জানুয়ারি মাস থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। 

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ৬টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া আরও ৩টি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঢাকায় ১০ হাজার ৫০ টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশে ৮ই মার্চ সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসবাহী রোগীর অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৯ জন করোনাভাইরাসবাহী রোগী সনাক্ত হয়েছে।

তাঁদের মধ্যে ৪ জন বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁরা আগে থেকেই নানা অসুখে ভুগছিলেন। ৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

গতকল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭ হাজার ৩৮ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮৮৫ জনকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া ২৬৭ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ২৭৭ জনকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে।

গত ১৯-এ মার্চ থেকে বিদেশ হতে আগত সকল যাত্রীর সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিমান বন্দর হতে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকায় আশকোনা হাজী ক্যাম্প এবং টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

আমরা ইতোমধেই অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছি। বিদেশে অবস্থিত আমাদের মিশনগুলোকে কোন বিদেশি নাগরিককে ভিসা না দিতে বলা হয়েছে।

বিদেশ থেকে যাঁরা আসছেন তাঁদের তালিকা ঠিকানাসহ জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন আগত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছেন।

প্রিয় দেশবাসী,
আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তাঁদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুদ আছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

গতকাল পর্যন্ত ১৩ হাজার পরীক্ষা কিট মজুদ ছিল। আরও ৩০ হাজার কিট শিগগিরই দেশে পৌঁছবে।

ঢাকায় ৮টি পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে। দেশের অন্য ৭টি বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে। 

আমি স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রশাসনের সদস্যবৃন্দকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে একযোগে কাজ করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বেতার-টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

তবে কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রিয় দেশবাসী,
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন। তবুও আমি কয়েকটি বিষয়ের কথা আবারও উল্লেখ করছি।

দেশের সকল স্কুল কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।

সকল পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

আগামিকাল ২৬-এ মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরবারি অফিস বন্ধ থাকবে।
কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে।

গতরাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে।

২৪-এ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে।
এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যগণ সহায়তা করছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে যাঁরা জনগণকে সেবা প্রদান করবেন।

আন্তর্জাতিক ও আ লিক সহযোগিতার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ১৫ই মার্চ সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের সঙ্গে আমি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হই।
এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে আ লিকভাবে সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণের জন্য আমি সার্কভুক্ত দেশসমূহের নেতাদের উদাত্ত আহ্বান জানাই।

সার্কভুক্ত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো প্রস্তাবিত সুপারিশমালা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে। আমরা একটি যৌথ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত  নিয়েছি যাতে বাংলাদেশ ১৫ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,
যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সঙ্কটময় মুহূর্ত আসে। জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে। ইতঃপূর্বে প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরার মত মহামারী মানুষ প্রতিরোধ করেছে।

তবে ঐসব মহামারীর সময় বিশ্ব এখনকার ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল না। এত বিপুল সংখ্যক মানুষ তখন একদেশ থেকে অন্য দেশে বা একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতো না।
এ কারণে করোনাভাইরাস দ্রুততম সময়ে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিরও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই বিশ্ববাসী এ দুর্যোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাবে। 

এ সঙ্কটময় সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই।

দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। সর্বত্র বাজার মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,
করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে।   জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভাষাণচরে ১ লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনামুল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা ও দেওয়া হচ্ছে।

আমি নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আমাদের শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে। এই আঘাত মোকাবিলায় আমরা কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। 
রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যবসায়-বান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন মাস পর্যন্ত কোন গ্রাহককে ঋণ খেলাপি না করার ঘোষণা দিয়েছে।
রপ্তানি আয় আদায়ের সময়সীমা ২ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। মোবাইলে ব্যাংকিং-এ আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ বা জরিমানা ছাড়া জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,
আজ সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। তবে যেকোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

আমরা জনগণের সরকার। সব সময়ই আমরা জনগণের পাশে আছি। আমি নিজে সর্বক্ষণ পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।
আমাদের এখন কৃচ্ছতা সাধানের সময়। যতটুকু না হলে নয়, তার অতিরিক্ত কোন ভোগ্যপণ্য কিনবেন না। মজুদ করবেন না। সীমিত আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন।

আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।
এছাড়া, বেসরকারি মিল মালিকদের কাছে এবং কৃষকদের ঘরে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ আছে। চলতি মওসুমে আলু-পিয়াজ-মরিচ-গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।

কৃষক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, কোন জমি ফেলে রাখবেন না। আরও বেশি বেশি ফসল ফলান।
দুর্যোগের সময়ই মনুষত্যের পরীক্ষা হয়। এখনই সময় পরস্পরকে সহায়তা করার; মানবতা প্রর্দশনের।

বাঙালি বীরের জাতি। নানা দুর্যোগে-সঙ্কটে বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছে।

১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রæর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।

আবারও বলছি: স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সকলে যাঁর যাঁর ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

Saturday, November 30, 2019

ফরিদপুর শ্রীঅঙ্গনের এই দুর্দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় সবাই

শুনলাম শ্রীঅঙ্গনের মহানাম সম্প্রদায়ের সভাপতি কান্তি বন্ধু আজ 'প্রেসার বেড়ে' অ্যাম্বুলেন্সযোগে ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আশা করা যেতেই পারে তিনি এক সপ্তাহের আগে ফিরবেন না এবং চিকিৎসকরা তাঁকে 'উন্নত চিকিৎসা'র জন্য ভারতে পাঠাবেন। কী দারুণ টাইমিং! অসুস্থতাও আজকাল সময় করেই আসে! তাঁর শিষ্যরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, 'আহারে, বন্ধুসেবককে কতই না ভালোবাসতেন মহারাজ! তাঁর প্রস্থান সইতে না পেরে তিনিও শয্যাশায়ী হলেন!' অথচ লাইভ ভিডিওতে আপনারা দেখেছেন তিনি জনতার দাবির মুখে বন্ধুসেবকের সমাধি শ্রীঅঙ্গনে রেখেছেন, নইলে বাইরে পাঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা ছিলো। সমাধিস্থ করার সময়ও তিনি দূর থেকে দেখেই চলে যান, কাছে যাননি।
.
সুতরাং, আগামীকাল সভাপতি কান্তি বন্ধুর বাদী হয়ে করা ৩০৬ ধারায়(সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের জেল) করা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড শেষে আসামী বিজ্ঞান বন্ধু যখন আদালতের কাঠগড়ার দাঁড়াবেন, গতবারের মতো এবারও হয়তো বাদী কান্তি বন্ধু সেখানে অনুপস্থিত থাকবেন। এবার আর কেউ তাঁকে 'ছি ছি' করতে পারবে না, কারণ এবার তিনি 'অসুস্থ'! শোনা যাচ্ছে, বিজ্ঞান বন্ধুর পক্ষে লড়ার জন্য নেতা গোছের এপিপিসহ প্রায় ৩০-৪০ জন আইনজীবী নাকি ইতিমধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডঃ সুবল সাহার অধীনে আদালতে লড়ার জন্য প্রস্তুত! অন্যদিকে বাদীপক্ষে কোনো উকিলই এখনও ঠিক করা হয়নি বলে ভেতরের একটি সূত্র জানিয়েছে!
.
ফলে কি হবে? উকিলের অভাবে আসামী জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসবে কালকেই? কারণ কালকেই আদালতের ছুটির আগের শেষ কর্মদিবস! তবে ঐ আদালতের বিচারক যিনি, তাঁকে যতটা চিনি, এতো সহজে তাঁর হাত থেকে ছাড়া পাওয়া মুশকিল হবে। তিনি বরিশালের লোক, খুব শক্ত। ১ এপ্রিলে আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় আমার মা বাদী হয়ে করা মামলাটি তিনিই পি,বি,আইতে তদন্তে দিয়েছেন এবং সবাই বলে পুলিশের সংস্থাগুলোর মাঝে এই সংস্থাটির সুনামই এখন সবচেয়ে বেশি।
.
তবে প্রশাসন-পুলিশ-বিচারকেরা আন্তরিক থাকলেও যদি আঙিনার সাধুরা চুপচাপ অন্যায়কে মেনে নেন, তাহলে সেটা শ্রীঅঙ্গন শুধু নয়, মহানাম সম্প্রদায় শুধু নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্যও লজ্জা ও কলংকের হবে। যদি কাল বিজ্ঞান বন্ধু জামিনে বের হয়ে আসে এবং আবার আঙিনায় ফিরে আসে, তবে তা হবে বন্ধুসেবকের 'আত্মাহুতি'র অসম্মান। কেউ কেউ তো এমনও বলতে শুরু করেছে, বন্ধুসেবক আত্মহত্যা করার মতো দুর্বলচিত্তের লোক ছিলেন না, তাঁকে মেরে ঝুলানো হয়েছে। হয়তো কমিটির বাইরের কেউ কমিটির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের জটিলতার বিষয়টি জানতে পেরে ভেতরের কারো সাথে মিলে  এমন কান্ড ঘটাতেও পারে, বলা যায় না! সঠিক ময়না তদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বেরিয়ে আসবে।
.
আমার জানামতে আঙিনায় এমন কোনো সাধু এখন নেই যিনি জামিনে বেরিয়ে এলে আবার তাঁর কাজিন কমিটির সদস্য কিংকর সুকেশ সঞ্জীবনদের সহায়তায় শ্রীঅঙ্গনে প্রবেশের থেকে বিজ্ঞানবন্ধুকে রুখতে পারবেন। সভাপতি কান্তি বন্ধু 'অসুস্থ' হয়ে যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি, সেহেতু ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ উকিল সাহেবও চাইলে মামলা লড়তে পারেন। কিন্তু তিনি যেন হারার জন্য না লড়েন। যে কমিটির দেওয়া মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে বন্ধুসেবক 'আত্মহত্যা করেছেন', সেই কমিটি থাকতে বাকি অল্পবয়সী সাধুরা চাইলেও কিছু করতে পারছেন না বলে অনেকেই আমাকে ফোনে আক্ষেপ করেছেন। যারা প্রতিবাদ করতে পারতেন, তাঁরা বিভিন্ন সময় প্রায় একই ধরণের অভিযোগে কমিটি থেকে এমনকি সম্প্রদায়ের সাধারণ সদস্যপদ থেকেও বহিস্কৃত হয়েছেন! তাই তাঁরাও চাইলে কিছু করতে পারছেন না। আবার শুনলাম সাধুদের বাইরের আইন জানা সদস্যরা কমিটির গঠনতন্ত্র এমনভাবে করে রেখেছেন যেন সহজে ভেঙেও দেওয়া না যায়! এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল সাহাকে সভাপতি পদ থেকে সরানোর পর তিনি নাকি ঐ গঠনতন্ত্রের দুর্বলতার সুযোগে মামলা করে দিয়েছিলেন কমিটির বিরুদ্ধে!
.
এদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাধুদের দেওয়া ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষে সভাপতি সময় চেয়েছিলেন কাল রবিবার পর্যন্ত, যে কাল সন্ধ্যা ৭টায় মিটিং হবে কমিটির সাথে সাধুদের, কমিটি ভাঙ্গার ব্যাপারে। তিনি 'অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি' হওয়াতে সেটাও আর হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে! তার মানে এতোকিছুর পরেও এবং জেলা প্রশাসক অতুল স্যারের নির্দেশ/অনুরোধ স্বত্ত্বেও কমিটি বহাল থাকছে। শুক্রবার সাধুদের অনশনে বসা যাতে নাহয়, সেজন্যই মিটিংয়ের তারিখ দেওয়া হয়েছিলো?
.

তবে আশার কথা হলো, যতদূর জানি এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ যেহেতু দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করেছে, তাই পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দিয়েছে। 'নিজেদের কলংক মুছতে বা ঢাকতে' আরেকটি মামলা দিয়েছেন মহানাম সম্প্রদায়ের সভাপতি কান্তি বন্ধু ব্রহ্মচারী বাদী হয়ে, ৩০৬ ধারায়।এই মামলাটি কোথায় হয়েছে জানি না। যদি থানায় হয়ে থাকে, তাহলে এখানে উকিল না থাকলেও চলবে। এখানে জিআরও/সিএসআই বাদীর হয়ে মামলা লড়বেন। কারণ, থানা হয়ে কোর্টে গেলে মামলার বাদী হয়ে যায় রাষ্ট্র। আর যদি মামলা আদালতে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে উকিল নিয়োগ দেওয়া লাগবে। সেক্ষেত্রে সভাপতি যেহেতু হাসপাতালে, সেহেতু যেকোনো একজন সাধুই চাইলে সাহস করে আদালতে গিয়ে একজন উকিল নিয়োগ দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে এদের বিরুদ্ধে আমি আমার মামলায় কোনো হিন্দু উকিলকে পাইনি, তাই বলা যায় এখানে মুসলিম উকিল লাগবে। উকিল না পেলে আমাকে জানাবেন, আমি জোগাড় করে দেবো এবং বন্ধুসেবকের ভক্তরা মামলার খরচ চালাবে। তবুও বন্ধুসেবকের আত্মাহুতি যেন কিছুতেই বৃথা না যায়।
.
গত ২১/০৯/১৮ আঙিনার ভেতর আমাকে মারার মামলায় কোর্টে প্রতিপক্ষে স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর তৃষ্ণা সাহার বড় ছেলেসহ সকল আসামীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে এই শ্রীঅঙ্গন বর্তমান কমিটির প্রভাবশালী সদস্য নারায়ন উকিল বলেছিলেন, সবসময় ৩-৪ জন সাধু মন্দিরে থাকলেও তাঁদেরকে কেন আমি সাক্ষী মানিনি? অতএব মারার কোনো ঘটনাই নাকি ঘটেনি! আমি বলেছিলাম, সাধুরা ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, মামলার ঝামেলায় জড়াতে চান না, তাই প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের সাক্ষী মেনেছি। বলেছিলাম সিসি ফুটেজ দিয়ে প্রমাণ করুন ঘটনা ঘটেছে কিনা। তাঁরা ফুটেজ দেখাতে পারেন নি। উল্টো রাষ্ট্রপক্ষের উকিল অনিমেষ রায়-জাহীদ ব্যাপারিরা নিষ্ক্রিয় থেকেছেন বিধায় আসামীরা খালাস পেয়ে গেছে শক্ত সাক্ষ্যর পরেও! (পরে রিভিশনের আবেদন করেছি) এবার বুঝলেন তো, আমি কেন একথা বলেছলাম বা রিভিশন পিটিশন লিখেছিলাম? স্থানীয়দের ভাষ্য, সাধুরাও অনেকটা কমিটির হাতে জিম্মি। এদের বাইরে বললেই বন্ধুসেবকের মতো পরিণতি ভোগ করতে হয় অথবা বহিস্কৃত হতে হয়। এতোদিন আমি এসব বলেছি বলে আমাকে 'নাস্তিক' ট্যাগ দিয়েছে, এখন বন্ধুসেবকের মৃত্যুর ঘটনায় সবাই তার সত্যতা পাচ্ছে!
.
মোট কথা, যেহেতু সভাপতি কোনো শক্ত ভূমিকা এখানে রাখছেন না, সেহেতু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিখ্যাত এই শ্রীধাম ও সম্প্রদায়ের সম্মান ও নিরাপত্তার প্রশ্নে ফরিদপুরের বর্তমান প্রশাসন, পুলিশ ও আদালতকে এখন এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। লাশ সমাধিস্থ করার দিনের লাইভ ভিডিওসহ আমার সকল লেখায় অনেক তথ্য আছে, যা কাজে লাগানো যেতে পারে। একজন স্থানীয় হিসেবে ও বন্ধু সেবক মামার ভাগ্নে হিসেবে এই বিষয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি প্রার্থনা করছি, যেন এই 'হত্যাকান্ডে'র সাথে জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে দেশ-বিদেশে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায় এবং বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ সাধারণ জনগণ কতটা সুরক্ষিত আছে তা প্রমাণ করা যায়। অপরাধী নিজের দলের হোক আর বাইরের, কাউকেই যেন মাননীয়া ছাড় না দেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা তিনি, তিনিই আমাদের শেষ ভরসাস্থল। জয় বাংলা।
.
দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী

Sunday, November 17, 2019

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ রোধে করণীয়

আমি বলে দেই কেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। শুনবেন? হয় আপনার ভুলের কারণেই এবং সবকিছু মেনে নেওয়ার প্রবণতা থেকেই। হ্যাঁ, নিচের কথার সাথে মিলিয়ে দেখুন ঠিক কিনা।

দোকান থেকে আপনাকে যে সিলিন্ডারটি দিয়ে যায়, সেটি পুরাতন কিনা বা মরিচা ধরা কিনা, কোথাও ছিদ্র আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখুন। আমার ধারণা আপনি অতো দেখতে যান না। পুরাতন বা মরিচা ধরা সিলিন্ডারটিই আপনি মেনে নেন।

সিলিন্ডারের এই দশা কিন্তু এমনিতে হয়নি, হয়েছে অব্যবস্থাপনার কারণে। খালি সিলিন্ডার কিভাবে আছাড় দিয়ে ফেলা হয় আনা-নেওয়ার সময় কিংবা গ্যাস ভরার আগে, সেটা দেখলেই বুঝবেন। উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় গ্যাসসহ এসব সিলিন্ডার, অথচ আনা-নেওয়ায় যত্ন করা হয় কম, কাজেই থেকে যায় ঝুঁকি। 

তাই এখন থেকে দোকান থেকে সিলিন্ডার দিয়ে গেলে পুরাতন মরিচা ধরা সিলিন্ডার নেওয়া বাদ দিন। নতুন সিলিন্ডার দিতে বলুন। না দিলে অন্য দোকান থেকে নিন। এই প্রতিবাদ প্রতিটা জেলায় শুরু করেন, দেখবেন তারা বাধ্য হবে নতুন সিলিন্ডার দিতে এবং যত্ন করতে। আমি সবসময় নতুন সিলিন্ডার দেখে নেই। উচ্চদাম নিয়েও প্রতিবাদ জানাতে বলতাম, কিন্তু আমি জানি আপনারা কেউ সেটা করবেন না। মেনে নিয়েছেন সবাই।

তারপর লক্ষ্য করুন আপনার গ্যাসের পাইপে কোথাও ছিদ্র আছে কিনা। কিভাবে বুঝবেন? সিলিন্ডার থেকে পাইপ হয়ে গ্যাস যাওয়ার পথে কোথাও ছিদ্র থাকলে গ্যাস বাইরে বেরিয়ে যাবে। সিলিন্ডারের সুইচ অন করলেই (নিচের দিকে দিলেই) গ্যাস বের হবে, কিন্তু গ্যাসের চুলার সুইচ অন না করলে সেই গ্যাস নাকে লাগার কথা না। যদি লাগে, তাহলে বুঝবেন কোথাও ছিদ্র বা লিকেজ আছে। সেটা খুঁজে বের করতে মেকানিক ডাকুন। এটা জরুরি। ছিদ্র বন্ধ করার আগেই রান্না করতে যাবেন না।

মাঝে মাঝে রেগুলেটর পুরাতন হয়ে যায় অথবা বাইরে ঠিকঠাক দেখালেও ভেতরের পিনটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওখান দিয়েও গ্যাস বের হয়। ওটা দিয়ে সিলিন্ডারের সুইচ উপরে উঠালে বা গ্যাস নির্গমণ বন্ধ করলেও পিন নষ্টের কারণে গ্যাস বের হতেই থাকে।

একটু দামী হলেও নিরাপত্তার বিবেচনায় গ্যাসের চুলা কিনবেন অটোমেটিক দেখে। ম্যাচ দিয়ে জ্বালাতে হয় এমনটা না কেনাই ভালো। লিকেজ থাকলে ঘর গ্যাসে ভরে থাকবে এবং ম্যাচের কাঠি জ্বাললেই বিস্ফোরণ ঘটবে। আমার বাসার গ্যাসের চুলা প্রায় ১৫-১৭ বছরের পুরাতন। কিন্তু অটোমেটিক। চুলায় চুইচ দিলে অটোমেটিক সুইচের নিচের কাঠির ঘর্ষণের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে গ্যাসের চুলা জ্বলে ওঠে।

গ্যাসের সিলিন্ডারের আশেপাশে কাছাকাছি বা গা ঘেঁষে কোনো গরম বা রান্না করা কিছু রাখবেন না। এসব গরম বস্তুর স্পর্শে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে পারে।

আমার বাসার গ্যাসের চুলাটি আছে একটি ইট-সিমেন্টের তাকে উপর, আর সিলিন্ডার রাখার জায়গা তার নিচে। অর্থাৎ গ্যাসের চুলা আর সিলিন্ডারের মাঝে শক্ত তাপ কুপরিবাহী দেয়াল আছে। এটার কারণে গ্যাসের চুলার আগুণ বা গরম কিছুতেই সিলিন্ডারের গায়ে লাগে না। আমার বাবা(কবি বাবু ফরিদী)-কে ধন্যবাদ, এমন সুন্দর নিরাপদ ব্যবস্থাপনা রেখে যাওয়ার জন্য। সুতরাং গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডারের মাঝে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

গ্যাসের চুলায় দুধ বা অন্য কিছু চড়িয়ে দিয়ে অন্য কাজে মন দিবেন না। আপনার আসতে দেরী হলে বা অন্যমনস্ক হয়ে ভুলে গেলে দুধ উতলে উঠে গ্যাসের আগুনে পড়বে এবং সেই গরম দুধ সিলিন্ডারের গায়ে কোনোভাবে লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গ্যাসের চুলায় রান্না করার সময় দরজা-জানালা খুলে রাখবেন যাতে হাওয়া আসা-যাওয়া করে ঘরে। এতে লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হয়ে থাকলেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

রান্না শেষে সবসময় সিলিন্ডারের চাবি উপরে উঠিয়ে গ্যাস বের হওয়া বন্ধ করে যেতে ভুলবেন না। একটু অসাবধানতা বা সতর্কতা ও আলসেমির কারণেও আপনার ও আপনার পরিবারের জীবন যেতে পারে। তাই সতর্ক হোন। এমনিতেও আপনি পত্রিকা পড়লেই বুঝবেন মৃত্যু কীভাবে হাজারটা ফাঁদ পেতে আমাদের আশপাশে অপেক্ষা করছে..

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী

Sunday, January 13, 2019

আমি কি অনেক বড় পাপ করে ফেললাম?

ফরিদপুরের নামকরা এক হোটেলের নিচের একটা সেলুনে ছোটবেলায় বাবার সাথে যেতাম চুল কাটাতে। চুল কাটানোকে বরাবরই আমার খুব বিরক্তিকর কাজ বলে মনে হয় যদিও। সেলুনটা আমার কাকার বন্ধুর, আমাদের বাড়ির পাশেই বাড়ি। আমি গেলেই কাকা অথবা তার বোনের জামাই অনেক সময় নিয়ে যত্ন করে আমার চুল কাটতো। কাকা আছেন, কিন্তু তার বোনের জামাই বেঁচে নেই। সেই বিধবা পিসি এসেছিলেন বাসায়। পা ফুলে ঢোল হয়ে আছে তার, নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। সেই পা নিয়েই খুব কষ্টে হেঁটে হেঁটে এসেছেন।
.
আমার মা ডিএইচএমএস ডাক্তার, মানে হোমিও ডাক্তার। এলাকায় বেশ নামজশ আছে, তবে খুব সামান্য পয়সায় ওষুধ দেয় বলে কেউ কেউ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ১৮ বছর ফরিদপুর শ্রীঅঙ্গন দাতব্য চিকিৎসালয়ে মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মাসিক বেতনে সেবা দিয়েছেন। রোগীপ্রতি ৫টাকা ভিজিট ছিলো, যে পারতো না সে দিতো না। ওষুধ সরবরাহ করতো বাজারের মারোয়ারিরা। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর এলাকার প্রভাবশালীরা মন্ত্রী লোক পরিচয় দিয়ে সেখান থেকে আমার মাকে নানাভাবে অপমান করে সরিয়ে অন্য কাউকে বসানোর চেষ্টা করেছে। ঢাকায় থাকতে মা আমার কাছে এসব বলতো না, কিন্তু ফরিদপুর ফিরে দেখে প্রতিবাদ করেও ফল না পেয়ে নিজে থেকেই মাকে বসতে মানা করেছি।
.
তো, সেই দাতব্য চিকিৎসালয়ের সুবাদে মা দুঃস্থ জনগণের কাছে সেই ৫টাকা ১০টাকার ডাক্তারই রয়ে গেছে৷ এখন খুব সীমিত পরিসরে বাসাতেই টুকটাক রোগী দেখে, শিক্ষকতার পাশাপাশি। মা নিজেও অসুস্থ। অনেক সময় দেখি পাশের বিহারী কলোনির থেকে মহিলারা আসে ওষুধ নিতে। নেওয়া শেষে মা যখন খুব কষ্টে ৩০ টাকা চায়, তারা তখন কোছের ভেতর থেকে ১০টাকা বের করে বলে বাকি টাকা পরে দেবো। বাকির নাম তো ফাঁকি, কেউ কেউ দেয়, যারা দেয় না মাও ভুলে যায়। সামর্থবান কেউ কেউ এসেও বলে, 'ছেলের জন্যে চিপস কিনতে আইছিলাম দুকানে, তাই ১০টাকা আছে। কাকি পরে দিবানে..'
.
আমার মায়ের ওপর আমার তখন রাগ হয়। সে মুখ ফুটে বলতেও পারে না যে এই ওষুধ তো আর ফ্রিতে কেউ দেয় না, বাসার ওষুধ আমাকে বাজার থেকে কিনে আনতে হয়।  আসা-যাওয়াতেই তো ১০ টাকা অটোভাড়া অথবা ৪০ টাকা রিক্সাভাড়া চলে যায়! অন্য ডাক্তাররা যখন ১০০-২০০ টাকা ভিজিটের কমে রোগীই দেখেন না, এমবিবিএস ডাক্তারের ভিজিট যেখানে কমপক্ষে ৫০০ টাকা, সেখানে তিনি ওষুধ দিচ্ছেন ১০ টাকায়, যা খেয়ে ওসুখ নিশ্চয়ই ভালো হয়, নাহলে আবার আসে কেন?
.
বাবাকেও একই কাজ করতে দেখেছি। আমার দাদু প্রয়াত কালীপদ গুহ ছিলেন বড় ব্রিজের ঢালের নামকরা শুকু ডাক্তারের কম্পাউন্ডার। তবে এটা তাঁর মূল পেশা ছিলো না। জমিদারি সামলানো আর অন্য কাজের পাশাপাশি এটা করতেন সেই স্বাধীনতাপূর্বকালে। সেখান থেকে তিনিও কিছু বিদ্যা দিয়ে যান বাবাকে। বাবা চাকরি ওকালতি লেখালেখির পাশাপাশি বিকেলে এলাকার কেউ এলে ফ্রিতেই তাকে ওষুধ দিতো। এমনকি ফরিদপুর শহরের অনেক বড় বংশের মহিলারা বাবার বুদ্ধি নিয়ে ছেলেসন্তানের মা হয়েছেন। কিন্তু আমাদের দুঃসময়ে তাদের কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। তাই এখন মন চাইলেও মাথা সায় দেয় না সমাজকর্মে।
.
সেই পিসিও মাঝে মাঝেই ওষুধ নিয়ে টাকা না দিয়ে চলে যান। আজকেও ১০টাকা নিয়ে এসেছেন। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন তুমি টাকা চাও না? মা বললো, ওর স্বামী তোকে খুব ভালোবাসতো। তোর বাবা থাকতে তুই চুল কাটাতে গেলেই কাটানো শেষে তোর জন্য খাবার কিছু নিয়ে আসতো। আমি বললাম, সে হয়তো বাবা তার কোনো বড় উপকার করেছিলেন তাই। মা বলে, ওর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলেটা চুল কাটিয়ে ভালো পয়সা পেলেও মাকে দেখে না। খুব কষ্টে সে একটা এনজিওতে চাকরি করে খায়। ওর মতো আমিও তো একটা সময় খুব কষ্টে কাটিয়েছি, তাই আসলে আর না করতে পারি না। কষ্টের দিনেই ফিরাই নাই, আর এখন তো তুই চাকরি করিস! পাশের আরেক মহিলা ডাক্তারের কাছে যেতে বললেও যায় না, কারণ ঐ ওষুধে নাকি কাজ হয় না এবং ডাকাতি দাম রাখে।
.
এই কথা শোনার পর আমার কী করা উচিত আমি বুঝতে পারছি না। মাকে বললাম, ১০ টাকা দিয়ে তো অটোতে আসা-যাওয়ার খরচ হবে, বাকিটা? মা বললো, থাক বাবা, এনে দিস। এই বলে মা তাকে ওষুধ খাইয়ে দিলেন একটু, বাকিটা কাল এনে দিতে হবে। আমাদের কথা মনে হয় তিনি শুনে ফেলেছেন দূর থেকে। তাই যাবার আগে মাকে বলে গেলেন, বাকি টাকা ওষুধ নেওয়ার সময় দিয়ে যাবেন।
.
সেই থেকে আমার মনটা খারাপ হয়ে আছে।
আচ্ছা, আমি কি অনেক বড় পাপ করে ফেললাম?