খুঁজুন

Sunday, October 3, 2021

প্রসঙ্গ: বিদেশী চ্যানেল বন্ধ-- দ্বার বন্ধ করে কি ভ্রমটাকে রুখে দেয়া যাবে?

 মনে হচ্ছে যেন সেই আলিফ লায়লার যুগে ফিরে গেছি! 

 

"কতসব নতুন কাহিনী,

মনভরে দেয় তার বাণী!

কতযুগ পেরিয়ে গেছে,

তবু নতুন রয়ে গেছে..."


ঝিরঝির চ্যানেলের তুলনায় ৫ মিনিটের বিজ্ঞাপনের পর ২-৩ মিনিট নাটক/সিনেমা/খবর! সেই ভালো, সেই ভালো! এত চ্যানেল কেন! শুধু বিটিভি কেন নয়?


--এমনটা বলে বেশ কিছু হাহা রিয়্যাক্ট আমি আদায় করতেই পারতাম। কিন্তু ভাঁড় হতে কেন যেন ইচ্ছা করছে না আমার আজ। বিদেশী চ্যানেল বন্ধের কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ পাচ্ছি না আমি। সিরিয়ালের বিরুদ্ধে আমিও, কিন্তু সেটা চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে নয়। ঐ চ্যানেলগুলো দেখে যেমন ঝগড়া শেখা যায়, আবার এটাও ঠিক যে ঐ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ঘরে অনেক ঝগড়া-অশান্তি কমেও আসে। 


খেলা? খেলা বাদ? শুধু একটি দেশী চ্যানেল দেখব এই ডিজিটাল যুগে? আর ডিসকভারি/ ন্যাট জিও চ্যানেল? দেখব না? বাচ্চারা কার্টুন দেখবে না? ভিন্ন ভাষার চ্যানেল দেখব না, ভিন্ন কালচারের সাথে পরিচিত হব না? নতুন কিছু শিখব কীভাবে? ভালো কিছু করার প্রতিযোগী মনভাবে আসবে কী করে যদি 'দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি'? 


আচ্ছা, বিবিসি, সিএনএনও দেখবো না? আমাদের ইংরেজি উচ্চারণ, শোনা, বলা --এসব ফ্লুয়েন্ট করার সস্তা এই পথটাও বন্ধ থাকবে? কেন? এসব চ্যানেলের কী দোষ? 


মূল দাবিটা কী? বিদেশী চ্যানেল আমাদের দেশে দেখাতে হলে বিজ্ঞাপনের জন্য আমাদেরকে টাকা দিতে হবে? বেশ ভালো কথা। তেমনটা হলে আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। দেশ উন্নত হবে আরও। কিন্তু তারা যদি না দেয়, যদি বলে থাকো তোমরা একজন ঘরে হয়ে.. দেইখো না আমাদের চ্যানেল, যদি ঘরে ঘরে গিন্নীরা বিদ্রোহ শুরু করে, যদি টিভিতে সিরিয়াল-সিনেমা-খেলা-নাটক নিয়ে ব্যস্ত মানুষগুলো বিনোদনের অভাবে এই করোনাকালে গৃহবন্দী হয়ে আত্মঘাতি হয়ে ওঠে? সেই শুধু বিটিভির যুগের মতো আমাদের নাট্যশালা, প্রেক্ষাগৃহ বা সিনেমাহলগুলো অতোটা মুখরিত নয় এখন; সেই আমলের মতো মানের ছবি, নাটকও কতটা দেখতে পাই আমরা তা নিয়ে মতভেদ আছে। তাহলে মানুষ যাবে কোথায়, দেখবে কী আর মনটা ভালো রাখবে কী করে হাজারটা সমস্যাময় জীবনে?


নাকি সমস্যাটা বিদেশী সংস্কৃতি, ভাষা আর খোলামেলা পোশাকে? আমরা কি দেশটাকে আফগানিস্তান বানাতে চাইছি? নিশ্চয়ই না? আচ্ছা, পর্ণসাইট বন্ধ করে কি সেগুলো দেখা ঠেকানো গেছে? ভিপিএন কি উধাউ হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে? ইয়াং জেনারেশন কি ভিপিএন দিয়ে পাবজি খেলছে না? অবিবাহিত তরুণ ইন্টারনেটে কিছু দেখবে না, টিভিতেও কিঞ্চিত খোলামেলা পোশাক দেখবে না, তাহলে কী করবে? পাশের বাড়িতে গিয়ে ঝাপ দেবে, নাকি ধানক্ষেতে গিয়ে অপেক্ষা করবে? নাকি এগুলো বন্ধ করলেই তাদের যৌন চাহিদা কমে যাবে? নাকি আমরা চাইছি বাল্যবিবাহকে প্রমোট করে দেশকে জনসংখ্যার ঘনত্বে ১নং থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশে উন্নীত করতে? 


একইভাবে বর্ডার দিয়ে অবৈধভাবে মোবাইল সেট যাতায়াত বন্ধ না করে শুধু নিবন্ধনের নামে সেটপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করালে দেশ প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে যাবে। কেননা এত দাম দিয়ে উন্নত প্রযুক্তির পণ্য কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। নিবন্ধনে জোর দিতেই হয় যদি, এসব পণ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখা ভালো। আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ারও কোনো বিকল্প নেই। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সমাজের আয়না। এগুলোকেও একেবারে বন্ধ করা উচিত হবে না। 


বৈশ্বায়নের এই যুগে তথ্যপ্রবাহ, সংস্কৃতির আদান-প্রদান, বিনোদন, প্রযুক্তি, ভাষা ইত্যাদিকে সীমিত করে কোনো জাতি উন্নতির শিখরে উন্নীত হতে পারবে না, একঘরে হয়ে থাকতে হবে। অন্যদের চ্যানেল আমরা না দেখলে, অন্যদের পণ্য আমরা না কিনলে ওরাও আমাদের চ্যানেল দেখতে ও পণ্য কিনতে উৎসাহী হবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমাদের বরং কীভাবে অন্যদের চেয়েও ভালো মানের শিক্ষণীয়, বিনোদনমূলক, নিউজ বেইজড চ্যানেলগুলো তৈরী করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশীয় সিনেমাহলগুলোতেও বিদেশী সিনেমা দেখালে প্রতিযোগিতা বাড়বে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, প্রকৃত গুণীজনের মূল্যায়ন করতে হবে। ভালো কাজ হলে বাইরের দেশেও আমাদের চ্যানেল দেখবে। যেমনটা দেখে ওরা আমাদের মোশাররফ করিম-চঞ্চল চৌধুরীর নাটক ইউটিউবে। ইউটিউব, নেটফ্লিক্স যেমন চালু রাখতে হবে, তেমনি চরকি, বায়োস্কোপ, হইচই ইত্যাদিও চালু থাকবে। যার বিজ্ঞাপন দেখতে আপত্তি নাই সে টিভি চ্যানেল দেখবে (বিজ্ঞাপনের মাত্রাও কমিয়ে আনা আবশ্যক, কেননা বিজ্ঞাপন বিরতি আজকাল বিজ্ঞাপন বিরক্তির কারণ হয়), যে বিজ্ঞাপনে আগ্রহী নয় সে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই দেখবে। প্রয়োজনে ভালো আর মন্দের, উত্তম আর অধমের পার্থক্য বুঝিয়ে দিতে হবে, কিন্তু কিছুতেই ব্যাক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।


শেষ কথা হল, বিদেশী চ্যানেল বন্ধ নয়, বরং কীভাবে কেবল সেবার মান আরও উন্নত ও গ্রাহকবান্ধব করা যায় সেদিকে মনযোগ দিতে হবে। সারা বিশ্বের খবর, বিনোদন, সংস্কৃতি ইত্যাদির অবাধ প্রবাহ থাকতে হবে দেশে। সুস্থ বিনোদনের উৎসগুলোকে সচল রাখতে হবে। 'অসুস্থ' বলেও মৌলবাদী, আফগানি চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে না। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাঙালিরা যেই সংস্কৃতিকে লালন করে আসছে, তার চর্চা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অন্য সংস্কৃতিগুলিকেও দেখার ও জানার সুযোগ রাখতে হবে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রালগ্নে আমরা আফগানিস্তানের পথে নয়, বরং ইউরোপ-আমেরিকা, রাশিয়া-ভারতের পথে হাঁটতে চাই। 

জয় বাংলা।


লেখা: দেব দুলাল গুহ।

Friday, April 23, 2021

লকডাউন বাস্তবায়নে আমি যা করতাম: দেব দুলাল গুহ

১. শপিং মল ও দোকান খোলা থাকলে থাক, কিন্তু আমি যাব না। বেঁচে থাকলে করোনাকালের পরেও নতুন কাপড় পরতে পারবো। কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে এবারই হবে শেষ নতুন জামাকাপড় পরা। তাই, যারা দলবেঁধে কেনাকাটা করতে যাবেন, তারা একসাথে কাফনের কাপড়টাও কিনে নিয়ে আসলে সুলভে কিছুটা ছাড়ে পেলেও পেতে পারেন। কিনে রাখেন, অতি দ্রুতই কাজে লাগবে। শুধু নিজের জন্য না, পরিবারের প্রত্যেকের জন্য একটি কিনবেন। সাথে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা তুলে বাসার খোলামেলা কোনো একটা জায়গায় রেখে দিবেন। কেননা, যদি আপনি ও আপনার পরিবারের সবাই শ্বাসকষ্টে ভুগে মরে থাকেন বাসায়, যাতে কেউ অন্তত আপনাদের দাফনের কাজটা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে রাখাই ভালো। কাজেই, ঈদের শপিং করতে বের হলে এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করে বের হবেন। ঠিক আছে?


 .

২. এখানে সরকারের দোষ দেওয়া যাবে না। দোকানমালিকদের দাবির মুখেই খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তাদের নাকি জীবিকা হুমকির মুখে! আমার মনে হয় না বাংলাদেশে এত গরিব দোকানদার বা ব্যবসায়ী আছেন, যারা অন্তত দুইটা সপ্তাহ কোনোমতে ডাল আর আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে ঘরে থাকতে পারবেন না। দোকানের কর্মচারীদের দুই সপ্তাহের খোরাক দেওয়াটা তাদের দায়িত্ব। তবে এক্ষেত্রে সরকারেরও দায় আছে। লকডাউনের আগে এইসব শ্রমিক, রিক্সাচালক, কর্মচারীদেরকে দুই সপ্তাহের রেশন দিয়ে তারপর ঘরে থাকতে বললে লকডাউন আরও ভালো কার্যকর হতো বলে মনে করি। বাংলাদেশের এখন সে সামর্থ আছে। প্রতিটি এলাকার সামর্থবান মানুষরাও এগিয়ে আসতে পারতেন। দানে সম্পদ কমে না, বরং বাড়ে। ঠিক কিনা? 

.

৩. আমি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকলে সবার আগে দেশের নাগরিকদের একটা নির্ভুল তালিকা (ডেটাবেজ) করতাম এনআইডি কার্ড দেখে। কার্ডে সবার পেশার নির্ভুল তথ্য রাখা নিশ্চিত করতাম। নিশ্চয়ই প্রায় সবারই বর্তমানে সিমকার্ড আছে। প্রতিটি সিম থেকে নগদ বা বিকাশ এ্যাকাউন্ট খুলাতাম। নিশ্চিত করতাম এক আইডি দিয়ে একাধিক এ্যাকাউন্ট যাতে খোলা না হয়। এরপর খেটে খাওয়া অসচ্ছল পরিবারের অন্তত একজনের একাউন্টে দুই সপ্তাহের খোরাকি ভাতা পাঠিয়ে দিতাম। সরকারি তহবিল থেকে এতো টাকার যোগান দেওয়া সম্ভব নাহলে সামর্থবান ব্যবসায়ী, দলীয় নেতা, বিত্তবানদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটা ফান্ড করতাম। খুব কঠিন কাজ নয় এটা। ইচ্ছা, সততা ও আন্তরিকতা থাকলেই সম্ভব। এভাবে দিলে দুর্নীতি করার বা মেরে খাওয়ার সুযোগ কম থাকবে। এরপরেও একটা হটলাইন থাকবে, যেখানে কেউ না পেলে এনআইডি নম্বরসহ অভিযোগ দেবে। এভাবে আগে সহায়তা দিয়ে তারপর লকডাউন দিলে সবাই সেটা মানতো। না মানলে আমি কড়া ব্যবস্থাও নিতে পারতাম। এই মুহূর্তে কড়া লকডাউনের বিকল্প নেই। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরার, বাকি সময় ঘরে থাকার বিকল্প নাই। প্রয়োজনে পুলিশ কেন, সেনাও নামাতে পারবেন এরপর না মানলে। কিন্তু এখন ফাঁকিবাজটাও পুলিশ ধরলে বলবে কেনাকাটা করতে যাচ্ছি অথবা বলবে ঘরে বসে থাকলে খাব কি তাই জীবিকার সন্ধানে বের হয়েছি। তখন আর এসব বলার সুযোগ পাবে না। বললেই এনআইডি চেক করে বলা যাবে, আপনি না দুদিন আগেই ভাতা নিলেন? লকডাউনের আগে এই টাকায় কেনাকাটা করেননি কেন? আরেকটা কাজ করতাম, মাস্কের বিরুদ্ধে যারাই বয়ান দেবে, যারাই করোনাভাইরাসকে পাত্তা না দিয়ে বয়ান দেবে, তাদেরকেই সাথে সাথে আইনের আওতায় আনতাম। এভাবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ বা এক মাসের কঠোর লকডাউন দিলে করোনার প্রকোপ কমে আসতো। 

.

৪. যেভাবে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, মাস্ক ছাড়া যেভাবে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে তা দেখে শংকা হয়-- হয়তো বাঙালি জাতিটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এভাবে চলতে থাকলে! কেননা সচেতন মানুষও একদিন না একদিন তাদের দ্বারা আক্রান্ত হবেই। কেননা করোনা শুধু ড্রপলেটের মাধ্যমে নয়, বরং করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ভেসে ভেসে দূরদূরান্তে ছড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই বাইরের দেশগুলো আমাদেরকে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেবে। আমাদের বাণিজ্য, পড়ালেখা, ভ্রমণ সব নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। কারণ কেউই খাল কেটে কুমির (ভিসা দিয়ে ভাইরাস) আনতে চাইবে না। 

.

৫. খুব আশার খবর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়া তাদের টিকা স্পুটনিক-ভি উৎপাদনের ফর্মুলা আমাদেরকে দিতে রাজি হয়েছে। আমরা যৌথ মালিকানায় আমাদের দেশে টিকা উৎপাদন করতে পারবো, দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা রপ্তানি করে রাশিয়াকে লভ্যাংশ দিয়ে নিজেরাও লাভ করতে পারবো। এটাই আমাদের লাভ। আর এখানে রাশিয়ার লাভ আমাদের দিয়ে টিকা উৎপাদন করিয়ে নেওয়া৷ কেননা আমাদের সস্তা শ্রমিক আছে, ঔষধশিল্পে আমরা অনেক এগিয়ে। দ্রুত উৎপাদনে যাওয়া গেলে দ্রুত নিজেরাও নিরাপদ হতে পারবো, রপ্তানি করে আয়ও করতে পারবো। রাশিয়ার এই টিকার দাম প্রতিটি ১০ থেকে ২৭ ডলার, কার্যকারিতা ৯১.৬%। যেখানে অক্সফোর্ড -এ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা যা ভারতের সেরাম উৎপাদন করছে, তার দাম ৪ ডলার, কার্যকারিতা ৮১.৩০%। আবার চীনের সাথে মিলে এই অঞ্চলে টিকার মজুদ করতেও বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে, যা জরুরি প্রয়োজনে কাজে লাগবে। 

.

৬. টিকার মজুদ দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। আগে মানুষ টিকা নিতে অনাগ্রহী ছিলো নানা কারণে, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় যেমন ছিল, আবার ধর্মব্যবসায়ী মূর্খ বক্তাদের বিভ্রান্তিকর বক্তৃতাও ছিলো। এখন মানুষ বুঝতে পারছে টিকার আবশ্যকতা। তাই দ্রুত টিকা শেষ হচ্ছে। আমার মনে হয় টিকার এই সংকট হতো না যদি ভারত প্রতিশ্রুত টিকা সময়মতো দিতে পারতো। ভারত সেটা পারছে না, তার কারণ সবাই আগে নিজের উদরপূর্তি করে তারপর অন্যকে দেয়, তা সে যত বড় বন্ধুই হোক। নিশ্চয়ই যেকোনো চুক্তির মতো এই চুক্তিতেও কিছু টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন ছিল এবং নিজের প্রয়োজন না মিটিয়ে কাউকে দেবে না এমন কথাও হয়তো লেখা ছিল। তাই বাংলাদেশ ভারতকে বাধ্য করতে পারছে না। ঐদিকে ভারতেও হঠাৎ করোনার প্রকোপ বেড়েছে। ভোটের হাওয়ায় প্রচারণা একটা কারণ, ঐদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা এবং কুম্ভমেলার মতো লোকসমাগমও কারণ। যে কারণেই হোক, ভারতের নিজেদের নাগরিকদের জন্যই এখন টিকা দরকার। তারপরেও ভারত টিকা দিতো, মোদিকি নিজেই ডিরেক্ট অর্ডারে দিতেন। কিন্তু প্রথমত তিনি বাংলাদেশ সফরের সময় আমাদেরই একটা অংশ তাঁকে আসতে দেবো না বলে ও জ্বালাও-পোড়াও করে  তাঁকে ও তাঁর দেশকে অসম্মানিত করেছি।  এটা এখানে একটা বড় প্রভাব ফেলেছে বলে আমার মনে হয়। কেননা, যে পিএম করোনাকালের পর প্রথম বিদেশ সফরেই নিজের রাষ্ট্রীয় বিমানের প্রথম ফ্লাইটেই বাংলাদেশ এলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও যখন চেয়ে টিকা পাচ্ছিলো না তখন পেয়েছিলাম আমরা, পেয়েও সেই টিকার বদনাম করতেও ছাড়েনি আমাদেরই সেই অংশটি, গুজব রটিয়েছে ভারতের টিকায় শুকরের চর্বি আছে ইত্যাদি বলে! এখানে তাই বন্ধুত্ব নিয়ে টিটকারি করারও কিছু নেই, কেননা নিজের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখেই সবাই পরের জন্য করার চেষ্টা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও টিকা আটকে দিয়েছিল, বলেছিল আগে তাদের নাগরিকদের না দিয়ে বাইরে দেবে না। আমাদের ভাগ্য বরং ভালো যে ভারতেও ঐ টিকা উৎপাদন হচ্ছে এবং ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক বর্তমানে অন্য যেকোনো সময়ের(মুক্তিযুদ্ধ ও '৭৫ এর পর) চেয়ে ভালো। তাই দ্রুতই সঠিক সময়ে আমরা টিকা পেয়েছি। ভারতের পিএম ও সেনাপ্রধান এলেন ফ্রি টিকা উপহার হিসেবে নিয়ে, আর আমরা তাদেরকে আসম্মানিত করলাম। আমাদেরকে টিকা দিয়ে এমনিতেও নিজ দেশে বিরোধী দলের চাপের মুখে ছিলেন মোদিজি, বলা হচ্ছিল দেশের মানুষ পায় না আর তিনি বাইরে বিলাচ্ছেন! টিভি দেখেন, ভারতের করোনা মহামারির অবস্থা আসলেই ভয়াবহ। সুতরাং, সরকার খুবই ভালো কাজ করেছে রাশিয়ার টিকার উৎপাদনের চুক্তি করে। মানতেই হবে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এখন দ্রুত উৎপাদনে যাওয়া আবশ্যক। যতদিন তা করা যাচ্ছে না, ততদিন ভারতের থেকে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়া থেকেও ভ্যাক্সিন কিনে আনা দরকার। 

.

৭. কমপক্ষে ৮০% জনগণকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে টিকার আওতায় আনা গেলে করোনা থেকে মুক্তির আশা করা যাবে। তার আগ পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। বেঁচে থাকাটা জরুরি। বেঁচে থাকলে আবার অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে কি হবে যদি আমার মানুষই না বাঁচে? সহায়তা দিয়ে কঠোর লকডাউন, প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি, ভ্যাক্সিন কিনে এনে দ্রুতই ৮০% নাগরিককে দিয়ে ফেলা দরকার। আর সবকিছুর আগে দরকার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণে আনা, অর্থনীতকে সচল রাখা। সর্বোচ্চ নেতৃত্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একা সৎ, পরিশ্রমী, কর্মঠ হলে হবে না। মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী, নীতিবান লোকদের খুঁজে বের করে সঠিক চেয়ারে বসাতে হবে। 

তাহলেই করোনাকে ভয় নয়, করবো আমরা জয়।  

জয় বাংলা। 


দেব দুলাল গুহ নিপুণ