শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে অখাদ্য খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিলো, তাতে তো বিক্রি বাড়ার কথা, সাপ্লাই বাড়ার কথা দাম বাড়িয়ে হলেও! তাদের তো আক্ষরিক অর্থেই আসমানে পাখা মেলার কথা ছিলো! তাহলে না বেড়ে কমছে কেন? সমস্যাটা কী?
প্রথমত, ফিলিস্তিনিদেরকে ১ টাকা করে দেওয়ার কথা বলে বেচলেও আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে এক টাকা দেওয়ার কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। এটা প্রায় অসম্ভব, কারণ ফিলিস্তিনে কোনো সরকার নেই। সরকার না থাকলে তারা টাকা দেবে কাদের কাছে? হামাসের কাছে? না, হামাসের মতো সংগঠনের সাথে টাকার লেনদেন দিনের আলোতে করা সম্ভব না। তা হলে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে আকিজ গ্রুপ তথা বাংলাদেশ। আবার নিজেরা টাকা নিয়ে গিয়ে ফিলিস্তিনে দিয়ে আসাও সম্ভব না, কারণ সেটা এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা, যুদ্ধের মধ্যে কে যাবে মরতে? ফ্রান্স ফিলিস্তিনে সহায়তা দিচ্ছে বিমান থেকে নিচে ফেলে, সেটাও আকিজ গ্রুপ করেনি। আবার জাতিসংঘের মাধ্যমেও দেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। কাজেই, ফিলিস্তিনিদের দেওয়ার কথা বলে তারা যে ধার্মিকদের আবেগকে কাজে লাগাচ্ছে, এটা সাধারণ জনগণ দেরীতে হলেও বুঝতে শুরু করেছে।
দ্বিতীয়ত, স্বাদের দিক দিয়ে কোনোকিছুই Coca-Colaর বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি, পারবেও না। সূর্যের বিকল্প সূর্য হয় না, চাঁদের বিকল্পও চাঁদ হয় না। তাই যারা আসলেই নিজের কষ্টার্জিত টাকায় ভালো কিছু খেতে চায়, তারা কোকই খাচ্ছে। তবে এটাও বলা দরকার যে বাংলাদেশের কোক আর ভারতের কোকের স্বাদে পার্থক্য আছে। এখানে ঝাঁজ কম, ওখানে বেশী। সেক্ষেত্রে কোকের উচিত মানোন্নয়নের দিকেও নজর দেওয়া।
তৃতীয়ত, স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই গানবাজনা হারাম বলে প্রচার চালানো হলেও এই দেশ থেকে গানবাজনাকে ঝেটিয়ে বিদায় করা সম্ভব হয়নি, হবেও না কোনোদিন। তাই যারা গানবাজনা পছন্দ করে, তারা Coke Studio বাংলা এর বাংলা গানকে পুনরুজ্জীবীত করে বিশ্বের দরবারে আরও জনপ্রিয় করে তোলার কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ কোক খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এই যেমন আমি! অপেক্ষায় থাকি কবে অর্ণবদা নতুন 'রিয়েল ম্যাজিক' নিয়ে হাজির হচ্ছেন তার জন্য।
চতুর্থত, বয়কটিদের আসর উদ্দেশ্য কোক, স্প্রাইট, সেভেন আপ ইত্যাদিকে মার্কেট থেকে হটানোই শুধু নয়, নিজেদের মুসলিম দেশ থেকে আনা 'পামির কোলা'র মতো ড্রিংক বাজারে ছড়ানো। ফলে ঐসব ড্রিংক মোজো কিছুটা মার্কেট দখলে নিয়েছে বলে কৃত্রিমভাবে কিছুকিছু জায়গায় মোজো কম নিচ্ছে আর বলছে সাপ্লাই কম।
পঞ্চমত, যা শোনা যাচ্ছে তা হলো, মোজোর প্ল্যাস্টিকের বোতলটার সাপ্লাই আসতো প্রাণ-আর,এফ,এল গ্রুপ থেকে। কিছুদিন যাবৎ সেই সাপ্লাইয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এটা হতে পারে তিন কারণে। এক-- আসলেই কোম্পানিটির উৎপাদন কম হচ্ছে বিধায় সাপ্লাই দিতে পারছে কম। দুই-- বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মোজোর একচেটিয়া রাজত্বের সময়ে বোতলের দাম বেশী চাইছে তারা, যা দিতে রাজি হচ্ছে না মোজো। তিন-- প্রাণের পণ্য ভারতে ভালোই ব্যবসা করছে। চানাচুর থেকে শুরু করে চিপসের বিশাল ব্যবসা তাদের ভারতে। আকিজের ইন্ধনে পিনাকীদের ভারত বয়কট আন্দোলনে মোজোর বোতল সাপ্লাইয়ার তাই হয়তো ভারতের চাপে আছে, আশংকায় আছে ভারতে নিজেরাই বয়কটের শিকার হওয়ার। তাছাড়া প্রাণকে কাদিয়ানীদের পণ্য বলে সেটা বয়কটের ডাকও কোনো কোনো ব্যক্তি দিয়েছে। ফলে এই সুযোগে হয়তো প্রাণ নিজেদের ড্রিংক ব্যবসাকেই এগিয়ে নিতে চাইছে মোজোকে বোতল না দিয়ে।
কারণ যা-ই হোক, আমরা আমাদের কষ্টার্জিত টাকায় বাজারে যেটা অপেক্ষাকৃত ভালো মানের পাব, হোক তা দেশী বা বিদেশী, তাই কিনে খাব। দেশী বলেই নিম্নমানের বাইক-ট্রাক রাস্তায় নামাবো না, বাইরের অপেক্ষাকৃত ভালোটাই কিনবো। এইচপি, ডেল, ম্যাকবুকের জায়গা কি দোয়েল নিতে পেরেছে? পারেনি। তবে যেসব পণ্য বাইরের চেয়ে আমরা নিজেরাই ভালো বানাই, তা আমরা অবশ্যই কিনে ব্যবহার করবো।